Home Lead 3 পরকীয়া প্রেমের জেরেই স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করিয়েছে স্বামী বাবুল আক্তার।

পরকীয়া প্রেমের জেরেই স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করিয়েছে স্বামী বাবুল আক্তার।

শীঘ্রই চার্জসীট

by Nahid Himel

নিউজ ডেস্ক  ঃ     দীর্ঘ আড়াই বছর দফায় দফায় তদন্ত সংস্থা বদল হওয়ার পর চট্টগ্রামে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম ওরফে মিতু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। পিবিআই বুধবার জানিয়েছে, সাবেক এসপি বাবুল আক্তার তার পরকীয়া প্রেমের জের ধরে সৃষ্ট পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে ভাড়াটিয়া খুনী দিয়ে স্ত্রী মিতুকে হত্যা করিয়েছে। তদন্তে এটা পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে।

ফলে মিতু হত্যাকে কেন্দ্র করে এই পর্যন্ত বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বামী বাবুল আক্তার যে এই হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড তা পিবিআই তদন্তে পরিষ্কার হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, চূড়ান্ত অনুমোদনের পর শীঘ্রই এই মামলায় সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করা হবে আদালতে।

পরকীয়া প্রেমের জেরেই স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করিয়েছে স্বামী বাবুল আক্তার।

পিবিআই প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, চার্জশীট চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যেই চার্জশীট আদালতে দাখিল করার প্রস্তুতি চলছে।

মামলার তদন্তে পিবিআই যাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট প্রদানের জন্য চূড়ান্ত করেছে তারা হলেন মিতুর স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তার, তার বিশ^স্ত ও প্রধান সোর্স মোঃ কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা, এই হত্যাকা-ে অস্ত্র সরবরাহকারী অস্ত্র ব্যবসায়ী মোঃ এহতেশামুল হক ভোলা, কিলিং মিশনের সদস্য মোঃ মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম, মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু ও মোঃ শাহজাহান। আসামিদের মধ্যে মুসা ও কালু পলাতক রয়েছে। ভোলা জামিনে, অবশিষ্টরা জেলে।

চার্জশীটের চূড়ান্ত প্রতিপাদ্যে উল্লেখ করা হচ্ছে, সাবেক এসপি বাবুল আক্তার বিদেশী এনজিও কর্মকর্তা জনৈক গায়ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার কারণে সৃষ্ট গৃহবিবাদে অতিষ্ঠ হয়ে ৩ লাখ টাকার কনট্রাক্টে ভাড়াটিয়া খুনী দিয়ে অর্থাৎ তার বিশ^স্ত সোর্স মুসার নেতৃত্বে স্ত্রী মিতুকে সুপরিকল্পিতভাবে খুন করিয়েছে। তদন্তে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। পিবিআই সূত্রে জানিয়েছে, শুরু থেকে আড়াই বছর ধরে এই হত্যাকা-ের সর্বশেষ তদন্তে পিবিআই নিশ্চিত হয়েছে বাবুল আক্তারই এই হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড। এতে করে বাবুল আক্তার তার নিজের দায়ের করা মামলাতেই অভিযুক্ত হয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর অঞ্চলের এসপি নাঈমা সুলতানা জানিয়েছেন, নূরনবী ও রাশেদ নামের আরও দু’জনকে এই হত্যাকা-ে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ পাওয়া গেলেই দু’জনই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। সঙ্গত কারণেই তাদের চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। চার্জশীটে বাবুল আক্তারসহ পাঁচজনকে কারাগারে এবং মুসা ও কালুকে পলাতক দেখানো হচ্ছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজার জেলায় বাবুল আক্তার দায়িত্ব পালনকালে গায়ত্রী অমর সিং নামের এক বিদেশী এনজিও কর্মকর্তার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন।

স্ত্রী মিতু এই বিষয়টি দেরিতে হলেও জানতে পারেন। ফলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জের ধরে তার স্ত্রীকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরই জের ধরে তার বিশ^স্ত সোর্স মুসাকে দিয়ে পরিকল্পনা করিয়ে কিলিং মিশন দিয়ে স্ত্রীকে প্রকাশ্যে ভোরে চট্টগ্রামের জিইসি মোড় এলাকায় হত্যা করানো হয়। ওই সময় স্ত্রী মিতু তার পুত্রকে স্কুলগামী বাসে উঠিয়ে দেয়ার জন্য বাসা থেকে রওনা দিয়েছিলেন।

এই ঘটনায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা তুলে ধরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে ভোলা, ওয়াসিম ও আনোয়ার। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই মেট্রো অঞ্চলের সিনিয়র পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, এই চার্জশীটে সাক্ষী হিসেবে থাকছেন ৯৭ জন। ইতোমধ্যে মেমো অব এভিডেন্সের অনুমোদন দিয়েছেন সরকার পক্ষের কৌঁসুলি। গত সোমবার রাতে মহানগর পিপি এই চার্জশীটে তার মতামতসহ অনুমোদন প্রদান করেন।

পিপি এ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন আহমদ জানান, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে পুত্রকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর জিইসি মোড়ে নৃশংসভাবে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। পরদিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে সিএমপির পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন বাবুল আক্তার নিজেই। কিন্তু পিবিআইয়ের তদন্তে হত্যাকা-ের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা উঠে আসায় ২০২১ সালের ১২ মে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এই হত্যাকাণ্ডের দু’মাসের মাথায় পুলিশের চাকরি থেকে অবসর নেন বাবুল আক্তার।

হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তারের শ্বশুর ও শাশুড়ি অর্থাৎ মিতুর বাবা ও মা বাবুলের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। কিন্তু দিন যতই গড়িয়েছে আসল রহস্যের উন্মোচন হতে থাকায় শ^শুর শাশুড়ি বাবুল আক্তারকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং প্রকাশ্যে জানান দেন যে, তাদের কন্যাকে বাবুলই হত্যা করিয়েছে। এ নিয়ে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন বাবুল আক্তার। পিবিআই রিমান্ডে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার আশ^াস দিয়ে আদালতে গিয়ে উল্টে যান অর্থাৎ স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকার করেন। এরপরও পিবিআই থামেনি। বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকেও একেবারে শেষ পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আদালতের নির্দেশে।

পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে বাবুল আক্তারই এই হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড। অথচ তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও যেভাবে মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন পুলিশের সকল পর্যায়কে বিস্মিত করেছে। তবে চাকরি জীবনে মাঠ পর্যায়ে তিনি একজন ভাল পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে রাষ্ট্রীয় অনেক পদকও অর্জন করেছেন। কিন্তু পরকীয়ার প্রেমে পড়ে শেষ পর্যন্ত তিনি স্ত্রীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে তাড়িত করেছে নানাভাবে। পিবিআই জানিয়েছে, তারা খুব দ্রুততম সময়ে আদালতে দাখিল করার প্রস্তুতি নিয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment