কয়েক দিন ধরে রশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার আলোচনা চলছে। তেলের (ক্রুড অয়েল) নমুনা তাই চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। দু-এক দিনের মধ্যে তা রাষ্ট্রীয় তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) নিজস্ব পরীক্ষাগারে পরীক্ষা নিরীক্ষা হতে পারে।
এ বিষয়ে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. লোকমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরীক্ষার জন্য রাশিয়া থেকে নমুনা হিসেবে ৫০ লিটার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পাঠিয়েছে।
সেটি এখনো চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে। পরীক্ষাগারে আনতে আরো দু-এক দিন সময় লাগতে পারে। আমরা এই তেল ব্যবহার উপযোগী করতে পারব কি না, তা পরীক্ষা করে দেখব। ’
ইআরএল এমডি আরো বলেন, ‘রাশিয়া পরিশোধিত তেলের যে প্রস্তাব দিয়েছে সেই তেল কিভাবে কেনা যায়, সেটি নিয়েও পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ’ বিপিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সম্প্রতি বিপিসি থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের নমুনা পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল, যার কারণে রাশিয়া থেকে এই নমুনা পাঠিয়েছে। ’
বিপিসি সূত্র বলছে, রাশিয়া থেকে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তেলের মান, ব্যবহারের উপযোগিতা, দাম, আনার খরচসহ বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে দেখছে বিপিসি। এরই মধ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে এক দফা বৈঠকে প্রাথমিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইআরএলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সম্প্রতি রাশিয়া থেকে পরিশোধিত তেল আনার যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা আসলে পুরোপুরি পরিশোধিত নয়। ব্যবহারের জন্য এটি আবার পরিশোধন করতে হবে। কারণ রাশিয়ার পরিশোধিত তেলে সালফারের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা শোধন করতে হতে পারে। এতে খরচ বেড়ে যাবে। রাশিয়া যদি বাংলাদেশের ব্যবহার উপযোগী করে তেল পাঠায়, তাহলে হয়তো খরচ কম পড়বে। যার কারণে আগে অপরিশোধিত তেলের নমুনা পাঠিয়েছে রাশিয়া। নমুনা পরীক্ষার পর বিষয়টি সম্পর্কে আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপর দাম ও অন্যান্য খরচ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত, চীনসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ রাশিয়া থেকে কম দামে জ্বালানি তেল কেনা শুরু করে। গত মে মাসে বাংলাদেশকেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। তবে বাংলাদেশের আগ্রহ পরিশোধিত জ্বালানি তেল নিয়ে, যার কারণে দেশটি থেকে সম্প্রতি পরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহে একটি প্রস্তাব দিয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক মতবিনিময়সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বিশ্বের যে দেশে জ্বালানি তেলের দাম কম পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই আমদানি করা হবে। ’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার তেল আমদানির বিষয়টি কার্যকর হলে দুইভাবে লাভবান হবে বাংলাদেশ। কম দামে জ্বালানি তেল পাওয়ার সঙ্গে চাপ কমবে ডলারের ওপর। তবে এই তেল আমদানিতে যেন আমেরিকাসহ ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক ও ব্যাবসায়িক সম্পর্কে যেন কোনো প্রভাব না পড়ে, সেদিকটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরূল ইমাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা আছে, এই মূহূর্তে আমরা রাশিয়ার তেল আনলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। ফলে আমাদের যে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানির মূল বাজার আমেরিকা ও ইউরোপ, সেখানে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। ’ তিনি বলেন, ‘যদি ইউরোপ-আমেরিকা কোনো সমস্যা না করে তাহলে রাশিয়ার জ্বালানি তেল আমদানিতে আমাদের অনেক সাশ্রয় হবে। ’
উল্লেখ্য, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড বর্তমানে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত থেকে আনা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) শোধন করে ডিজেল, পেট্রল, অকটেনসহ বিভিন্ন রকম জ্বালানি তেল উৎপাদন করে। বছরে ১৫ লাখ টন তেল শোধনের সক্ষমতা আছে তাদের। এ থেকে বছরে ছয় লাখ টন ডিজেল পাওয়া যায়। আর দেশে ডিজেলের চাহিদা বছরে ৪৬ লাখ টনের মতো। মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশই ডিজেল। তাই কম দামে ডিজেল কেনায় আগ্রহ আছে সরকারের।