সোমবার সকালেও মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মি ও দেশটির সেনা সদস্যদের সঙ্গে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। রবিবার রাতে এবং সোমবার সকালে বাংলাদেশে নিক্ষেপ করা মর্টার শেল দুটি নিষ্ক্রিয় করেছে সেনাবাহিনীর ডিসপোজাল ইউনিট। সোমবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ঢেকিবনিয়ায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার অবতরণ করেছে। এতে সীমান্তে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, রবিবার বিকেলে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ওপারে ওয়ালিদং ও কক্যদইঙ্গা পাহাড়ে বিমান এবং হেলিকপ্টারে বোমা-মর্টার শেল হামলার পর পর মিয়ানমারের পুরনো রাজধানী ম্রাউক-উ টাউনশিপের লাক্কা গ্রামেও আরাকান আর্মি (এএ) ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। পৃথক বোমা হামলা ও গোলাগুলির ঘটনায় ওয়ালিদং পাহাড়ে ১০ জন এএ সদস্য ও ম্রাউক-উ টাউনশিপের লাক্কা গ্রামে তিনজন গ্রামবাসী ও তিনজন সেনাবাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। ওয়ালিদং পাহাড়ে গুলিবিদ্ধ এএ সদস্যদের তাদের নিজস্ব ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। তুমব্রু কোনারপাড়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতারা আহতদের জন্য ওষুধ কিনে পাঠিয়েছে সেখানে।
মিয়ানমারের পুরনো রাজধানী ম্রাউক-উ টাউনশিপে থেকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী মাইকিং করে ঘোষণা করেছে, দিনে এবং রাতের বেলায় স্থানীয় বাসিন্দারা (রাখাইন-রোহিঙ্গা) ঘর থেকে কেউ বের হতে পারবে না।
এ ঘোষণার পর বাজার করতে যাওয়া তিন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করেছে সেনা সদস্যরা। পুরনো রাজধানী ম্রাউক-উ এবং কিয়াউকতাও শহরে বাসিন্দাদের কেউ চলাফেরা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালাশে বাজারে-দোকানে যেতে পারছে না। আগা বার্মা, দক্ষিণ বার্মা ইত্যাদি অঞ্চলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রবিবার আরাকান আর্মি এএ এবং মিয়ানমার আর্মির মধ্যে ম্রাউক-উ টাউনশিপের লাক্কা গ্রাম এবং আউটকান গ্রামের মধ্যে রাস্তার পাশে সংঘর্ষ বাধে। বিকেল ৪টা নাগাদ গোলাগুলি শুরু হয়।
সোমবার সকাল থেকেই মিয়ানমারের সৈন্যরা আউটকান গ্রামে প্রবেশ করে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এলাকাবাসী জানায়, দুই পক্ষের মারামারির কারণে আউটকান গ্রামের পাশাপাশি আওতাধীন গ্রামের লোকজন গত দুদিন ধরে তাদের নিকটতম প্রিগচা পার হয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। গত কয়েক দিনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শতাধিক সৈন্য উত্তর উফের উদ্দেশে কিয়াউকতাও ত্যাগ করেছে। ম্রাউক-উ এবং কিয়াউকতাও শহরের মধ্যবর্তী কিয়াউক্যাট গ্রামে প্রবেশ করেছে ওই সৈন্যরা।
আগা বার্মার একটি সূত্র জানায়, রবিবার সন্ধ্যার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ভারি অস্ত্রের গুলি ছুড়লে ম্রাউক-উর কানসাইক গ্রামে দুই নারী ও এক শিশু মারা যায়। শিশুটি চার বছর বয়সী বালক, একজন ২৫ বছর বয়সী নারী এবং ৭০ বছর বয়সী দুই মহিলাসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অপর পাঁচ গ্রামবাসীকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। এ ছাড়াও নির্বিচারে আক্রমণ এবং ভারি অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন সাতজন।
গুলিবিদ্ধ আহতদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং চারজন মহিলা। তারা ৩৭৭তম ব্যাটালিয়নের কানসাইক গ্রামের কামানসাইক গ্রামীণ ব্যাটালিয়নের আর্টিলারি। গোলাগুলির কারণে প্রাণে বাঁচতে পালানোর সময় এই সাত নারী-পুরুষ গুলিবিদ্ধ হয়। সোমবার সকালে ম্রাউক-উর লাক্কা গ্রামের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এদিকে রবিবার রাতে রামু সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন থেকে বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ১০ জন সদস্য তুমব্রু উত্তর পাড়ার সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে একটি মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করেছে। সোমবার সকালে আরও একটি মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করে ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। উখিয়া থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন, পূর্বঅনুমতি ও পতাকা বৈঠক ছাড়া সীমান্তে হেলিকপ্টার-বিমান ওড়ানো ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বোমা নিক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং এর সঠিক জবাব দিতে সোমবার বেলা ১১টায় বিজিবির পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে পত্র পাঠানো হয়েছে। তবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই চিঠির উত্তর দেয়নি মিয়ানমার বিজিপি।