Home জাতীয় সেপা’র অপেক্ষায় দুই দেশের ব্যবসায়ীরা

সেপা’র অপেক্ষায় দুই দেশের ব্যবসায়ীরা

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

ঢাকা-দিল্লি বাণিজ্য বাড়াতে উভয় দেশের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) সম্পাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার ভারত সফরে যাচ্ছেন। চারদিনের এই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, অভিন্ন নদনদীর পানি বন্টন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সেপা) ব্যাপারে দুই দেশের যৌথ সমীক্ষা শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে সরকারের কাছে। যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় দেখা গেছে, সেপা চুক্তি হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে ১৯০ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি ১৮৮ শতাংশ বাড়বে। এতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি ১ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ভারতের জিডিপি শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বাড়বে। তবে এর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজস্ব হারানোর ঝুঁকিও আছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত থেকে এক লাখ ৪৪ হাজার ১৬০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি থেকে সরকার ১৭ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। সেপা বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব পর্যায়ক্রমে বহুলাংশে কমে যাবে। তবে সেপার সঙ্গে পণ্য বাণিজ্যের বাইরে সেবা ও বিনিয়োগসহ অর্থনৈতিক অন্যান্য বিষয় সম্পৃক্ত থাকায় সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর উপলক্ষে গতকাল রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, সেপা চুক্তির বিষয়ে এখনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আলোচনা চলছে।

এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সেপা চুক্তির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে উভয় দেশ এ বিষয়ে নেগোসিয়েশন বা আলাপ-আলোচনা শুরু করবে। আলোচনায় উভয়পক্ষ একমত হলে প্রধানমন্ত্রীর সফরেই চুক্তি সই হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে চেষ্টা করতে হবে ‘সেপা’ বাস্তবায়নের শুরুতেই যাতে সব শুল্ক তুলে নিতে না হয়। পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে শুল্ক প্রত্যাহারের দিকে যেতে হবে। পাশাপাশি ভারতের বাজারমুখী স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ভারত যাতে বেশি ভূমিকা রাখে সেই চেষ্টা থাকতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত ‘সেপা’য় পণ্য বাণিজ্য, সেবা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নামে তিনটি মাত্রা রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ব্যবধান কমিয়ে আনা এবং সংযোগ, নতুন নতুন বাজার তৈরি এবং সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বসহ নতুন অর্থনীতির নানা সুযোগ উন্মুক্ত করাই হচ্ছে প্রস্তাবিত সেপা চুক্তির মূল লক্ষ্য। উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে মাল্টি-মডেল সংযোগ এবং সহযোগিতাকে আরো গভীর করার দৃষ্টিকোণের মাধ্যমে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক এবং মূল নিয়মগুলির সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করার জন্য সেপা পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য সুবিধা বাড়িয়ে দেবে।

জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরসঙ্গী এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আযাদ চৌধুরী বাবু শনিবার   বলেন, সেপা সংক্রান্ত আলোচনায় আমরা এন্টি ডাম্পিংয়ের বিষয়ে কথা বলবো। যাতে বিভিন্ন পণ্যে আমরা শুল্কসুবিধা পেতে পারি। তার মতে, আমাদের পণ্যগুলো দেশটিতে ভালো বাজার পেলেই ভারত এন্টি ডাম্পিং দিয়ে দেয়। তারা যেন এটা না করে সেসব নিয়ে বিস্তারিত কথা হবে।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু সরকারি পর্যায়ে সেপা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাই এর পাশাপাশি আমরা আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরবো। সব মিলিয়ে সফরে আমরা দুটি বাণিজ্য বৈঠক করব। দুই বৈঠকেই আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ার প্রেক্ষাপটে সেপা নিয়ে আলোচনা অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা’র (সাফটা) মত বিদ্যমান আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থাগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বলে এটি আরো বেশি মনোযোগ পেয়েছে।

সেপা’র সুবিধা: ক্রমবর্ধমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পটভূমিতে পণ্য আমদানি, রপ্তানিসহ বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবস্থায় নতুন গতি পাবে। সেপা সই হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনা ৪০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) থেকে প্রত্যাহারের পর, ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় এফটিএ নিষ্পত্তি করতে চায়।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment