► সীমান্তে মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ করবে দুই দেশ ► বাংলাদেশ চায় তিস্তা চুক্তি, ভারত চায় ফেনী চুক্তি ► সেপা নিয়ে আলোচনা এ বছরের মধ্যে শুরুর নির্দেশনা
 
তৃতীয় দেশ"/>
Home Lead 3 বাংলাদেশকে ট্রানজিট সুবিধা দিল ভারত

বাংলাদেশকে ট্রানজিট সুবিধা দিল ভারত

যৌথ বিবৃতি

by Nahid Himel

► সীমান্তে মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ করবে দুই দেশ
► বাংলাদেশ চায় তিস্তা চুক্তি, ভারত চায় ফেনী চুক্তি
► সেপা নিয়ে আলোচনা এ বছরের মধ্যে শুরুর নির্দেশনা

 

তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছে ভারত। এ জন্য ভারত কোনো মাসুল নেবে না। তবে এ জন্য নির্দিষ্ট বন্দর বা স্থল কাস্টম ব্যবহার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে গত মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে দুই দেশের শীর্ষ বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

গতকাল বুধবার প্রকাশিত দুই দেশের ৩৩ দফা যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টি স্থান পেয়েছে।যৌথ বিবৃতিতে সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে উভয় পক্ষের কাজ করার অঙ্গীকার রয়েছে। শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ দ্রুত তিস্তা সই করতে ভারতকে  তাগিদ দিয়েছে। ভারত তাগিদ দিয়েছে ফেনী নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের জন্য।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারত রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও সংযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), মহাকাশ প্রযুক্তি, শক্তি এবং সমুদ্র অর্থনীতির মতো সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।

দুই দেশের শীর্ষ নেতারা আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক স্বার্থের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। কভিড-১৯ মহামারির প্রভাব এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধার কথা মাথায় রেখে শীর্ষ নেতারা এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্ব ও অংশীদারির চেতনায় বৃহত্তর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

তিস্তার জন্য তাগিদ

যৌথ বিবৃতিতে ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির অধীনে বাংলাদেশে পাওয়া পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার বিষয়ে সমীক্ষার জন্য কারিগরি কমিটি গঠনকে স্বাগত জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতের আলোচনার কথা স্মরণ করে ২০১১ সালে চূড়ান্ত খসড়া অনুযায়ী তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সই করার জন্য ভারতকে তাগিদ দেন।

এ বিষয়ে ভারত কী বলেছে তা বিবৃতিতে উল্লেখ নেই। তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম গত মঙ্গলবার শীর্ষ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, তিস্তা চুক্তি এখনো আশ্বাসের পর্যায়েই আছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নদীগুলোর দূষণের মতো সমস্যাগুলো মোকাবেলা করা এবং নদীর পরিবেশ ও নাব্যতা ঠিক রাখতে উভয় নেতা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আসবে

উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর চেতনায় দুই নেতা কাটিহার (বিহার) থেকে বোরনগর (আসাম) পর্যন্ত প্রস্তাবিত উচ্চ ক্ষমতার ৭৬৫ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনসহ দুই দেশের পাওয়ার গ্রিডগুলো একযোগে সংযুক্ত করার প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছেন।

ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। ভারত বলেছে, তারা এরই মধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে।

উভয় পক্ষ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে। বাংলাদেশ ভারতের কাছে জ্বালানি তেল চেয়েছে। ভারত এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে আলোচনায় সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। জ্বালানি তেল সরবরাহকারী হিসেবে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেডকে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে ভারত স্বাগত জানিয়েছে।

ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাড়ল

ভারত তার ভূখণ্ড ও অবকাঠামো ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে (বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশ) পণ্য রপ্তানির জন্য বিনা মাসুলে ট্রানজিট,  ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রস্তাব করেছে। ০ এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য বন্দর অবকাঠামো ব্যবহার করতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানির জন্য ভারত বাংলাদেশকে বিনা মাসুলে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সদ্য উদ্বোধন হওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটের মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভারতীয় পক্ষ এর কার্যকারিতা এবং সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে অনুরোধটি বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে। এটি এবং অন্যান্য আন্ত সীমান্ত রেল সংযোগগুলো কার্যকর করতে ভারত বাংলাদেশকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী ক্রসিংয়ে বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছে।

বাণিজ্য বাধা দূরীকরণ, সেপার জন্য নির্দেশনা

দুই নেতা সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির (সেপা) লক্ষ্যে এ বছরই আলোচনা শুরু করতে উভয় পক্ষের বাণিজ্যবিষয়ক কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজীকরণের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে তাঁরা স্থল শুল্ক স্টেশন/স্থল বন্দরে অবকাঠামো ও সুবিধা উন্নীত করার ওপর জোর দেন। এ ছাড়া তাঁরা শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর বাজার সুবিধার জন্য আখাউড়া-আগরতলা সমন্বিত চেকপোস্টসহ কোনো একটি বন্দর বিধি-নিষেধবিহীন রাখার অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেছে। বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের সমন্বিত চেকপোস্টের দ্বিতীয় গেটের উন্নয়নে ভারতের তহবিল দেওয়ার প্রস্তাবকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে। দ্রুত ওই গেটের কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আশ্বাস

ভারত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেছে। এই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত লোকদের তাদের স্বদেশে নিরাপদ, টেকসই এবং দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়কেই সহযোগিতা করতে ভারত অব্যাহত প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিয়েছে। ভারতই একমাত্র দেশ যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার—উভয়ের প্রতিবেশী।

আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্ব

উভয় পক্ষ আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে শক্তিশালী আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। ভারতীয় পক্ষ বিমসটেক সচিবালয় এবং এর অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেছে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) সভাপতি হিসেবে ভারতীয় পক্ষ বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের বিরল ভিডিও ফুটেজের যৌথ সংকলন 

উভয় নেতা বঙ্গবন্ধুর ওপর যৌথভাবে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মুজিব : দ্য মেকিং অব এ নেশন’ যত দ্রুত সম্ভব মুক্তি দেওয়ার অপেক্ষার কথা জানান। তাঁরা মুজিবনগর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা সড়ক’-এর কার্যক্রম পরিচালনা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণসহ অন্যান্য উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে সম্মত হন।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরল ভিডিও ফুটেজের যৌথ সংকলনেরও প্রস্তাব করা হয়। ভারত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠার প্রশংসা করেছে।

 

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment