সড়কে গণডাকাতির ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ চার কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন, টাকা দাবি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে থানার ওসি লুৎফুল কবীর এবং এসআই আহম্মেদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনার ওসি লুৎফুল কবীর ও এসআই আহম্মেদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরের ‘আইজিপিস কমপ্লেইন সেলে’ লিখিত অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার আজিজুল, নিশান, সুজাত ও নোইম হোসেনের অভিভাবকরা।
এর আগে ৭২ ঘণ্টায়ও তাদের আদালতে না তুলে থানা হেফাজতে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় ওসির বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দার মামলাটির শুনানির জন্য আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
এরই মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে দুই ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে। অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ৩০ জুন রাত সাড়ে আটটার দিকে গয়েশপুর-সড়াবাড়ি এলাকায় গণডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৩৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা লুট করে ডাকাত দল। এখন পর্যন্ত প্রকৃত ডাকাত ও লুট হওয়া টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ শিক্ষার্থীসহ চার নিরীহ কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে থানায় এনে ৭২ ঘণ্টা আটকে রেখে চরম অমানবিক নির্যাতন করেন ওসি। নির্যাতন বন্ধে এবং মামলা না দেওয়ার শর্তে অংক উল্লেখ না করেই টাকা দাবি করেন ওসি।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ওসির নির্যাতনে গুরুতর আহত কিশোরদের একজন সুজাতকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও ভর্তি করে পুলিশ। চার কিশোরের অভিভাবকদের কাছে ওসির দাবিকৃত টাকা আদায়ে তাদের বাড়িতেও যান এসআই আহম্মেদ এবং টাকা নিয়ে থানায় যাওয়ার পর তাদের সন্তানদের ছেড়ে দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন। এরপরই কিশোর আজিজুলের বাবা ধারদেনা করে ৫০ হাজার টাকা ও নিশানের বাবা ধারদেনাসহ গরু বিক্রি করে ৬৭ হাজার টাকা নিয়ে থানায় যান। যদিও টাকার অংক কম হওয়ায় তাদেরও ধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করে দেয়া হয়। ধাক্কা দেওয়া হয় নিশানের বড়বোনকেও। টাকা না পেয়েই ক্ষিপ্ত হয়ে চার কিশোরকে ফাঁসানো হয় ঝিনাইদহের আরেকটি সড়ক ডাকাতির পেন্ডিং মামলায়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সাতক্ষীরার তালা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের ক্যাডার থেকে ২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপির সংসদ সদস্য হাবীবুল ইসলাম হাবীবের সুপারিশে পুলিশে নিয়োগ পান ওসি লুৎফুল কবীর। সুপারিশ কর্তা সেই সংসদ সদস্য হাবীবুল ইসলাম এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় কারাগারে রয়েছেন। ওসি লুৎফুল কবীর তালা উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের লাউতারা গ্রামের বাসিন্দা।
মামলা ও অভিযোগের বিষয়ে ওসি লুৎফুল কবির বলেন, আমার বিরুদ্ধে কবে মামলা হয়েছে? কিসের অভিযোগ, কই আমি তো জানি না।
অভিযুক্ত এসআই আহম্মেদও ওসির সুরেই কথা বলেন এবং তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।