নিউজ ডেস্ক ৷৷  ঢাকা টু জলপাই গুড়ি দীর্ঘ যাত্রায় যাত্রী উঠা-নামার সুযোগ না থাকায় আন্তঃদেশিয় ট্রেন মিতালী যাত্রী খড়ায় ভুগছে। ৫৭ বছর পর যাত্রা শুরুর সময় থেকে এ পর্যন্ত ২০ বার ঢাকা টু জলপাই গুড়ি, ২০ বার জলপাই গুড়ি টু ঢাকায় যাওয়া আসা করেছে। মিতালীর আসন সংখ্যা অনুযা"/>
Home জাতীয় ঢাকা টু জলপাই গুড়ি দীর্ঘ যাত্রায় যাত্রী উঠা-নামার সুযোগ না থাকায় মিতালী আন্তঃদেশিয় ট্রেন যাত্রী খরায়

ঢাকা টু জলপাই গুড়ি দীর্ঘ যাত্রায় যাত্রী উঠা-নামার সুযোগ না থাকায় মিতালী আন্তঃদেশিয় ট্রেন যাত্রী খরায়

জেলা সদরের স্টেশনগুলোতে যাত্রী উঠা-নামার দাবী

by Nahid Himel

নিউজ ডেস্ক ৷৷  ঢাকা টু জলপাই গুড়ি দীর্ঘ যাত্রায় যাত্রী উঠা-নামার সুযোগ না থাকায় আন্তঃদেশিয় ট্রেন মিতালী যাত্রী খড়ায় ভুগছে। ৫৭ বছর পর যাত্রা শুরুর সময় থেকে এ পর্যন্ত ২০ বার ঢাকা টু জলপাই গুড়ি, ২০ বার জলপাই গুড়ি টু ঢাকায় যাওয়া আসা করেছে। মিতালীর আসন সংখ্যা অনুযায়ী ৪০ বারে ১৬ হাজার ৩৬০ জন যাত্রী মিতালীতে যাতায়াত করার কথা। অথচ যাতায়াত করছে মাত্র ২ হাজার ২৬৭ জন যাত্রী। অভিজ্ঞ মহলের মতে, ঢাকা টু জলপাই গুড়ি যাতায়াতের ক্ষেত্রে দীর্ঘ যাত্রায় পথিমধ্যে যাত্রী উঠা-নামার কোনো সুযোগ না থাকায় মিতালীর যাত্রী খরার কারণ। আন্তঃদেশিয় ট্রেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার একটি বিষয় থাকে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই নীলফামারী অথব সৈয়দপুরে যাত্রী ওঠা নামার ব্যবস্থা থাকলে মিতালীর যাত্রী সংখ্যা বাড়তে পারে বলে অভিন্জমহলের অভিমত।

চলতি বছরের পহেলা জুন থেকে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি (শিলিগুড়ি) টু ঢাকা সরাসরি আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস চালু হয়। ট্রেনটি চলাচল করছে নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্তের রেলগেট দিয়ে। পথে মিতালি এক্সপ্রেসের কোন যাত্রী নেয়ার সুযোগ রাখা হয়নি।

মিতালি ট্রেনে যাত্রী যারা হচ্ছেন তাদের ভারতের নিউ জলপাইগুড়িতে চেপে সরাসরি ঢাকায় নামতে হচ্ছে। একই ভাবে যারা ঢাকায় উঠছেন তাদের সরাসরি নিউ জলপাইগুড়ি গিয়ে নামতে হয়।

১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের সময় ৫ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যাওয়া এই রেলপথ চালুর জন্য নীলফামারীবাসী দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছেন। ৫৫ বছর পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চুয়াল দ্বি-পক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে এই রেলপথ উদ্বোধন করেছিলেন। এর সাড়ে সাত মাস পর ২০২১ সালেল ১ অগাস্ট শুরু হয় নিয়মিত পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল। তার ১০ মাস বাদে চালু হয় যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালি এক্সপ্রেস।

ট্রেনটি ভারতের হলদিবাড়ি স্টেশনে ১০ মিনিটের যাত্রা বিরতি দেয়। আর বাংলাদেশের চিলাহাটিতে ইঞ্জিনও চালক পরিবর্তনের জন্য থামে আধা ঘণ্টা। এছাড়া দীর্ঘ পথে আর কোনো বিরতি নেই। ট্রেনের ওয়াটারিং ও ক্লিনিং হয় ঢাকার কমলাপুর ও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে।

রেলওয়ে সুত্র জানিয়েছে, চিলাহাটিতে থামলেও সেখানে কোনো যাত্রী উঠতে বা নামতে পারেন না। জলপাইগুড়ি যেতে হলে যাত্রীকে ঢাকা থেকেই ট্রেনে চড়তে হবে যেতে। আর টিকিট কাটতে হবে ঢাকা বা চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে। ট্রেনের আসন বিন্যাসও হয় সেখান থেকেই।

মিতালি এক্সপ্রেস চালু হবার বেশ আগে নীলফামারীর চিলাহাটি পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী অ্যাডঃ নুরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের মধ্যে চিলাহাটি রেলষ্টেশনে পৃথক দুটি রেল কোচ দেয়া হবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেনটি আসার পর কোচ দুটি চিলাহাটিতে কেটে দিয়ে ট্রেনটি ঢাকা রওনা দিবে। ফিরতি পথে চিলাহাটিতে কোচ দুটি সংযুক্ত হয়ে নিউ জলপাইগুড়ি যাবে। এতে ওই দুই কোচে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলবাসী চিলাহাটি থেকে নিউজলপাইগুড়ি যেতে পারবে এবং ফিরতেও পারবে।

কিন্তু চলতি বছরের পহেলা জুন বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে নতুন দ্বার উন্মোচন করে আন্তঃদেশীয় তৃতীয় ট্রেন মিতালি এক্সপ্রেস। কিন্তু উত্তরাঞ্চলবাসীদের জন্য নীলফামারীর চিলাহাটিতে যাত্রী উঠা নামার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

রেলওয়ে সুত্র জানায়, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার বেলা পৌণে ১২টায় ছেড়ে ট্রেনটি বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনম্যান রেলষ্টেশনে পৌঁছায় রাত সাড়ে ১০টায়। ফিরতি যাত্রায় সোমবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে রওনা হয়ে পরদিন ভারতীয় সময় ৭টা ১৫ মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে। যাত্রীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম ঢাকা ও নিউজলপাইগুড়ি দুই স্টেশনেই স¤পন্ন করা হচ্ছে।

নীলফামারী চেম্বারের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সফিকুল আলম ডাব্লু জানান, উত্তরাঞ্চলবাসীর জন্য মিতালি এক্সপ্রেসে যদি যাত্রার শুরু থেকে দুটি কোচ নীলফামারীর চিলাহাটির জন্য রাখা হতো তাহলে এই দুই কোচে প্রতি ট্রিপে ১৬০ জন করে যাত্রী ভারতে যেতে ও আসতে পারতো।তিনি এটি চালু করনের জোর দাবি জানান।

রেলওয়ে নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. রুহুল আমিন বলেন, আপতত চিলাহাটি স্টেশনে টিকিট বিক্রি এবং আসন বরাদ্দের কোনো নির্দেশনা পাইনি। টিকিট সংগ্রহ করতে চট্টগ্রাম এবং ঢাকা স্টেশন থেকে। এ স্টেশনে ইমিগ্রেশন বা আদার্স কোনো কর্মকান্ড হবে না। সীমান্ত স্টেশন হওয়ায় ট্রেনটি এসে দাঁড়াবে এবং প্রয়োজনীয় কাজ শেষে ভারত বা ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক মো. হাফিজুর রহমান প্রামাণিক বকুল বলেন, “দীর্ঘ ৫৭ বছর পর যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের খবরে আমরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম। কিন্তু উত্তরাঞ্চলবাসীদের জন্য চিলাহাটিতে কোন আসন রাখা হয়নি। আমরা হতবাক ও আশাহত।

নীলফামারী জেলা ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, আমাদের আশা ছিল, ট্রেন চালুর প্রথম দিন থেকে চিলাহাটি থেকে এলাকার মানুষ ভারতে চলাচল করতে পারবে। কিন্তু চিলাহাটিতে যাত্রী উঠা-নামার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আমরা নিরাশ হয়েছি।   তিনি আরও জানান, এ এলাকার ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ এখন ভারতে চলাচল করে ১০০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাবান্ধা অথবা বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে। এতে অনেক অর্থ ও সময় অপচয় হয়।

এ ব্যাপারে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, আপতত ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি ও ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের মধ্যে চলাচল করবে। চিলাহাটিকে পরিপূর্ণ স্থলবন্দর হিসেবে উন্নীত করার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এরই মধ্যে আমরা কথা বলেছি, আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে উত্তরাঞ্চলবাসী মিতালি এ্ক্সপ্রেসে ভারতে চলাচল করতে পারবেন। ভবিষ্যতে আমরা অবশ্যই চিলাহাটিতে স্টপেজ পাব।

রেলওয়ের উপ পরিচালক (ইন্টারচেঞ্জ) মিহরাবুর রশিদ খাঁন জানান, মিতালী এক্সপ্রেসে মোট ৪০৯টি আসন রয়েছে। এতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চারটি বার্থ/সিট কোচ ও চারটি চেয়ার কোচ রয়েছে।

এদিকে মিতালি এক্সপ্রেসে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলবাসীরা সুবিধা পাচ্ছেন না। তবে সড়ক পথে এই সুবিধা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে ভারতের উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এনবিএসটিসি)। তারা এবার ভারতের উত্তরবঙ্গের কোচবিহার-রংপুর -কোচবিহার সরাসরি বিলাশবহুল এসি বাস সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৬ জুলাই সন্ধ্যায় ভারতের স্থলবন্দর চ্যাংরাবান্ধা ও বাংলাদেশের স্থলবন্দর বুড়িমারী সীমান্তে এসে এমনটাই জানিয়ে গেছেন ভারতের উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থপ্রতীম রায়। তিনি আরও জানিয়ে যান যে বাসটি কোচবিহার থেকে ছেড়ে চ্যাংরাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থল বন্দর হয়ে লালমনিরহাট ও রংপুর চলাচল করবে। আবার রংপুর থেকে একই পথে কোচবিহার ফিরবে। এতে করে দুই দেশের উত্তরাঞ্চলবাসী কম ভাড়ায় অল্প সময়ে এসি বাসে যাতায়াত করতে পারবেন।

শেয়ার করুন:

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment