Home ভ্রমণ তিস্তা ব্যারেজ এলাকা আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে

তিস্তা ব্যারেজ এলাকা আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

একপাশে ডালিয়া অন্যপাশে গুড্ডি মারি’ মাঝএলাকাখানে তিস্তা ব্যারেজ। দেশের একটি গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা। একটি দর্শনীয় স্থানও বটে। প্রতিদিন দুর-দুরান্তের মানুষ তিস্তা ব্যারেজ দেখার জন্য আসে। ছুটির দিনে তিস্তা ব্যারেজের উভয় পার্শ্বে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। গুরুত্ব অনুযায়ী এই এলাকাটি দেশের একটি মর্যাদাবান পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। অথচ এ ব্যাপারে নেই কোনো উদ্যোগ-আয়োজন। তবুও সাধারন মানুষ এখানে বেড়াতে আসে। তিস্তা ব্যারেজের রাস্তায় উঠে নদী দেখে, ব্যারেজের অবকাঠামো দেখে। নিজেরা নদী নিয়ে আলোচনা করে। ব্যারেজ থাকার পরও কেন শুস্ক মওসুমে নদী শুকিয়ে যায়? কেন পানি থাকে না? এই নিয়ে হয়তো নিজেরাই তর্ক বিতর্ক করে। ভাবে, আহারে ব্যারেজের চারপাশটা যদি আরও সুন্দর হতো। বসার ভালো জায়গা, খাবারের হোটেল যদি থাকতো তাহলে কতই না আনন্দের হতো…

তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পা রেখেই আমারও তেমনটাই মনে হয়েছে। ডালিয়া নামটা অনেক শুনেছি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই ডালিয়ায় ‘অবসর’ নামের একটি ভবনে ক্যাবিনেট মিটিং করেছিলেন। তখন থেকেই ডালিয়া এবং তিস্তা ব্যারেজ ব্যাপক আলোচিত হয়ে ওঠে। বহুবার ভেবেছি এলাকাটা দেখতে যাব। কিন্তু সময় ও সুযোগ হয়ে উঠছিল না। কিন্তু হঠাৎ ণে তিস্তা ব্যারেজ এলাকা যাবার সুযোগ হল। উদ্দেশ্য, তিস্তা ব্যারেজ দেখা এবং তিস্তা বিষয়ে সাধারণ মানষের সাথে কথা বলা। কিন্তু ব্যারেজ এলাকায় পৌঁছেই আমি যেন একটু আশাহত হলাম। কল্পনায় যা ভেবেছিলাম তা যেন মিলছে না। ব্যারেজে রং করা হয়েছে। নদীর কোনো গর্জন নেই। থাকবেই বা কেমন করে? উজানে ভারত তো তিস্তার পানি আটকে দিয়েছে। পানি বন্টন চুক্তি অনুযায়ী তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশ পাচ্ছে না।

একথা সত্য, উত্তরের জনপদ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা উন্নয়ন অবকাঠামোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত অবহেলিত এলাকা। এখনও এই এলাকার সাধারণ মানুষকে কর্মের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমাতে হয়। অথচ এলাকায় শিল্প, কল কারখানা থাকলে সাধারন মানুষ কখনই ঢাকার দিকে পা বাড়াতো না। কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকুক বিনোদনের সুযোগও নাই দেশের অবহেলিত এই অঞ্চলে। অথচ তিস্তা ব্যারেজকে গুরুত্ব দিয়ে ডালিয়া ও গুড্ডিমারিতে একটি একটি আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। পর্যটন কেন্দ্রের জন্য প্রথম যেটা জরুরি তা হলো একটি এলাকা এবং দর্শনীয় বিষয়। দুই শর্তই পুরণ করেছে তিস্তা ব্যারেজ এলাকা। দেশের এই গুরুত্বপুর্ন স্থাপনাটিকে দেখার জন্য প্রতিদিন অসংখ্যা মানুষ আসে। অবকাঠামো সুবিধা অর্থাৎ হোটেল, বেস্তোরা, বসার জায়গা না থাকায় তারা ইতঃস্তত ভাবে ঘুরে বেড়ায়। ভ্রাম্যমান দোকান পসরার অস্বাস্থ্যকর খাবার খায়। আসে আনন্দ নিয়ে, ফিরে যায় কষ্ট নিয়ে। অথচ একটা সমন্বিত উদ্যোগ এক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারে। ডালিয়া এবং তিস্তা ব্যারেজ দেশের গরুত্বপুর্ন একটি এলাকা। অথচ এলাকায় কোনো প্রাণ চাঞ্চল্য চোখে পড়লো না। ‘অবসর’ নামের যে ভবনটিতে ক্যাবিনেট মিটিং হয়েছিল সেই ভবনও শ্রীহীন অবস্থায় পড়ে আছে। রাষ্ট্রপ্রধান আসবেন বলে এলাকার রাস্তায় মেটাল ডিটেকটর সংক্রান্ত যে স্থাপনাটি বসানো হয়েছিল সেটিও অযত্ন অবহেলায় অনেকটাই শ্রীহীন। অথচ সামান্য আন্তরিকতায় তিস্তা ব্যারেজের এই এলাকাটি পর্যটনের আলো ছড়াতে পারে।

একটা ছোট ঘটনা, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় কয়েকজন তরুণকে দর্শনার্থীদের ছবি তুলতে দেখলাম। একজনের সাথে কথা হল, আগ্রহীদের ছবি তুলে মেইলে পাঠিয়ে দেয়। পেন ড্রাইভ থাকলে পেন ড্রাইভে ছবি ভরে দেয়। স্বাভাবিক দিনে তার দৈনিক আয় ৫ থেকে ৭’শ টাকা। ছুটির দিনে ১২০০ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত আয় করে সে। কাজেই ধারনা করুণ তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় প্রতিদিন কত দর্শনার্থী আসে। ব্যারেজের গুড্ডিমারি এলাকায় একটি বিরাট অংশ গাছ গাছালিতে ঘেরা। সমন্বিত পরিকল্পনায় এই অঞ্চলে পর্যটনের আকর্ষনীয় স্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য দরকার আন্তরিকতা। আশাকরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment