পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে প্রবাসী-অভিবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত হন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য মিডিয়ায় তাদের সরব উপস্থিতি ও দেশবিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য, বক্তব্য ও প্রচারের জন্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়, স্বাগতিক দেশের নানাবিধ আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ হয়ে পড়ে।
তাই বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো বিশ্ববাসীর কাছে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা এবং বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা মোকাবেলার জন্য স্থায়ী কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগে ‘অভিবাসী কূটনীতি’ নামে একটি অধিশাখা সৃষ্টি করে একজন পরিচালকসহ দুজন সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা পদায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অধিশাখা সৃজন করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগসহ অন্যান্য অংশীজনের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর কাজ শুরু করা হয়েছে।
কমিটি সূত্র জানায়, কমিটির আগের বৈঠকে বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক প্রচারণার বিষয় আলোচনা হয় এবং এগুলো বন্ধে মন্ত্রণালয়কে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে এসব কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে একটি আলাদা সেল গঠনের কথাও বলা হয়।
ওই বৈঠকে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দাকে পুঁজি করে সরকারবিরোধীরা দেশের ভেতরে ও বাইরে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা ব্যাপকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ’ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে এমন কোনো কলাম কারো কাছে থাকলে তা হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করলে সেটি বিভিন্ন মিশনে প্রচারের কথা বলেন সিনিয়র সচিব।
ওই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে কলাম বা প্রবন্ধ লেখার মতো দক্ষ জনবল না থাকায় সম্মানী দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কলামিস্টদের দিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক আর্টিক্যাল লেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু ভালো কলামিস্টের সংখ্যাও খুব কম। আগামী দেড় বছর বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী শক্তিগুলো সোচ্চারভাবে সমালোচনায় মেতে উঠতে পারে। ’
এ সময় মন্ত্রী ভালো কোনো কলামিস্টের সন্ধান থাকলে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে কমিটির সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এলে বিদেশিরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হন বলে সংসদীয় কমিটির একাধিক সদস্য মন্তব্য করেছেন। এ কারণে তারা বিনিয়োগ না করে ফিরে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা বলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আনা হলেও তারা বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়ে ফিরে যাচ্ছে এবং অন্যদেরও বাংলাদেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে। এ ছাড়া অনেক প্রবাসী বাঙালি দেশে বিনিয়োগ করতে চাইলেও তাদের জমি দখল, বাড়ি দখল থেকে শুরু করে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ফলে তারাও দেশে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। ’
বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর বিশ্বে ১৬৮তম স্থানে অবস্থান করছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো এখন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। ’ এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে দেশে কোনো বিনিয়োগ হবে না বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। বিনিয়োগ করতে গেলে বিভিন্ন সেক্টরে ধরনা দিতে হয়। বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই এখানে বিনিয়োগ না করে বাধ্য হয়ে তাদের দেশে ফিরে যাচ্ছেন। ’
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘দেশে প্রচুর বিনিয়োগের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিনিয়োগের লক্ষ্যে সরকার ও ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগগুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। ’
চলতি বছরের শেষ নাগাদ ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করা যাবে বলে সংসদীয় কমিটিতে অবহিত করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরে সাদা চামড়ারা বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে পরিদর্শনে আসা ব্যক্তিদের তেমন কোনো চেক না করে ছেড়ে দেওয়ায় তারা ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিষয়ে বিরূপ প্রতিবেদন দিয়েছে। অন্যদিকে প্রবাসী বাঙালি শ্রমিকরা দেশে এলে বিমানবন্দরে তাদের বিভিন্ন রকমের হয়রানি করা হয়। যে কারণে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। ’