যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা ও লেবার পার্টির প্রধান স্যার কেয়ার স্টারমার বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য চমৎকার সম্পর্কে আবদ্ধ এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। তিনি বলেন, লেবার পার্টি তরুণ প্রজন্মের নেতাদের সহায়তা ও উৎসাহ-উদ্দীপনাদানে কাজ করছে, যা আরও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণদের আকৃষ্ট করবে।এ সময় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে আসায় বাংলাদেশের \হপ্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান লেবার পার্টির এই নেতা। উভয় নেতা ব্রিটেনের লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী স্যার হেরল্ড উইলসনের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈঠকের স্মৃতিচারণ করেন। স্যার স্টারমার ২০১৬ সালে তার বাংলাদেশ সফর এবং সে সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেন। তিনি যুক্তরাজ্যজুড়ে লেবার পার্টি থেকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লোক প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষকে খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা থেকে রক্ষা করতে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনগণের ওপর ভিন্ন রকম প্রভাব ফেলছে কি না, তা পর্যালোচনার পরামর্শ দেন। এ সময় উভয় পক্ষ চলমান মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের কারণে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কে সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে মতবিনিময় করে। লেবার পার্টির নেতা বলেন, তারা যুক্তরাজ্য ও পশ্চিমের বড় খুচরা বিক্রেতাদের জন্য তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে ব্যয় ভাগ করে নেওয়ার পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। স্যার স্টারমার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলার প্রশংসা করেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ইসু্যতে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য লেবার পার্টির প্রতিশ্রম্নতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে জলবায়ু অংশীদারিত্বের প্রসারের প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশের ওপর ক্রমবর্ধমান বোঝা সম্পর্কে লেবার পার্টির নেতাকে অবহিত করেন। তারা বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি সশস্ত্র সংঘাতের সাম্প্রতিক বিস্তার নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী উলেস্নখ করেন, বাংলাদেশ তার ভূখন্ডের অভ্যন্তরে সংঘাতের উপচে পড়ার প্রভাব ছড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন করছে। পরে মেরিলেবোনের লর্ড স্বরাজ পাল তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের প্রবীণ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের জন্য তার প্রশংসা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক ও শিক্ষা অংশীদারিত্ব আরও এগিয়ে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর আগে শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন হাউজ অব লডর্সের সদস্য সুরাজ পল। লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী এ তথ্য জানান। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ডক্টর গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক এদিকে, বাংলাদেশে বিরাজমান বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরের দ্বিতীয় দিন গত শুক্রবার কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রির (সিবিআই) প্রেসিডেন্ট চেলসির লর্ড করন বিলিমোরিয়া সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান। তথ্য মতে, লর্ড বিলিমোরিয়া যুক্তরাজ্যের কারি শিল্পের উন্নয়নে তার কাজ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার নীতি সমুন্নত রাখা এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন উন্নয়ন গবেষণায় তার সরকারের প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে লর্ড বিলিমোরিয়ার প্রয়াত পিতা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল ফরিদুন বিলিমোরিয়ার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অনেকের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন। তিনি চলতি মাসে ভারত সফরকালে তাদের বংশধরদের জন্য একটি বৃত্তি প্রবর্তন করেন ভারতীয় শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য- এ কথাও উলেস্নখ করেন। বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন লর্ড বিলিমোরিয়া। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তার পছন্দের একটি বিষয়ে বক্তৃতা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বিকাশমান স্টার্ট-আপ পরিস্থিতি এবং 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার লক্ষ্যে সম্পন্ন করা কাজ সম্পর্কে লর্ডকে অবহিত করেন। লর্ড বিলিমোরিয়া ভবিষ্যতে সম্ভাব্য অংশীদারিত্বের সুযোগ অন্বেষণে আগ্রহ সম্পর্কে মতবিনিময় করেছেন। প্রসঙ্গত, লর্ড বিলিমোরিয়া প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান পার্সি বংশোদ্ভূত, যিনি যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডসে স্থান পেয়েছেন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।