চট্টগ্রাম ও বরিশালে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে প্রকাশ্যে এসেছে দলটির দুপক্ষের বিরোধ। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে গত রোববার চট্টগ্রামের বিক্ষোভ সমাবেশে চেয়ার ছোড়াছুড়িতে জড়িয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। এ সময় একজন আহত হয়েছেন। বরিশালে দলীয় কার্যালয়ের সিঁড়ির মঞ্চে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে দুই নেতার অনুসারীরা হাতাহাতি ও মারধরে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে দলটির দুপক্ষ।
চট্টগ্রাম : বিকালে নগরীর নূর আহমদ সড়কের দলীয় কার্যালয়ের সামনের চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের উপস্থাপক বক্তব্য রাখার জন্য তিন যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল, নাজিমুর রহমান ও সৈয়দ আজম উদ্দীনের নাম ঘোষণা করলেও তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি। পরে অপর যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারের নাম ঘোষণার পর তিনি বক্তব্য দিতে মঞ্চে উঠলে আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের বিরোধী বলয় হিসাবে পরিচিত কয়েকজন নেতা তাকে বক্তব্য দিতে নিষেধ করেন। এ সময় দুপক্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের কয়েকজন হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়িতে জাড়িয়ে পড়েন। এ সময় একজন আহত হন। তার মাথা থেকে রক্ত পড়তে দেখা যায়। তবে ওই ব্যক্তির নাম জানা যায়নি।
নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ আজিজ বলেন, নেতাদের কয়েকজন উপরে (মঞ্চে) জায়গা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন। তারা নাম ঘোষণার পরও বক্তব্য দিতে চাননি। এ সময় অন্য এক নেতাকেও বক্তব্য দিতে নিষেধ করেন তারা। এ অবস্থায় কর্মীরা মনে করেছিলেন বুঝি কিছু একটা হয়েছে। তাই বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
নগর বিএনপির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, নেতাকর্মীদের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। পরে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হয়েছে। তিনি জানান, সমাবেশেস্থলে একজনকে মোবাইল ফোন চোর সন্দেহে কয়েকজন মিলে মারধর করেছে। মারধরের শিকার ব্যক্তি অবশ্য ওই সময় নিজেকে বিএনপির কর্মী বলে দাবি করেন।
নগর বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, ইউনিট পর্যায়ের কমিটি গঠন নিয়ে নগর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সঙ্গে তিন যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল, নাজিমুর রহমান ও সৈয়দ আজম উদ্দীনের বিরোধ চলছে। রোববারের সমাবেশে সেই বিরোধ প্রকাশ্য আকার ধারণ করে।
এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং তিনজন কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে বিএনপির সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছেন। এটি দেখে সরকার এখন বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ প্রতিহত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
সমাবেশে নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ আজিজ, যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।
বরিশাল : নগরীর সদর রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ১১টায় উত্তর জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। সমাবেশ চলাকালে দলীয় কার্যালয়ের সিঁড়ির মঞ্চে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে দুই নেতার অনুসারীরা হাতাহাতি ও মারধরে জড়িয়ে পড়ে। এসময় দলীয় নেতা ও পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মারধরে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা হিজলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল গফফার তালুকদার ও মুলাদী উপজেলা বিএনপি নেতা সিকদার আলমগীর হোসেনের কর্মী।
বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপি আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মো. শহিদুল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মুকুল। সংগঠনের সদস্য আসাদুজ্জামান মুক্তার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন মুলাদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সত্তার খান, হিজলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল গফফার তালুকদার, জহির সাজ্জাদ, হান্নান শরীফ, মঞ্জুরুল হাসান মিলন, কবীর আফসারি, জিয়া উদ্দিন সুজন ও ওয়াহেদ হারুন, মুলাদী উপজেলা বিএনপি নেতা সিকদার আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
বগুড়া : সারিয়াকান্দিতে উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপি আলাদা কর্মসূচি পালন করেছে। স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব দেন, নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরে আজম বাবু, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল মাহমুদ। অপরপক্ষে পৌর বিএনপির নেতৃত্ব দেন নবনির্বাচিত সভাপতি সাহাদৎ হোসেন সনি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম হিরা। রোববার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে গার্লস স্কুল মোড় থেকে পৌর বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্কুল মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মাদ্রাসা মোড় থেকে উপজেলা বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মাদ্রাসা মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।