Home Lead 1 যুদ্ধ কখনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যুদ্ধ কখনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

* সামনে থেকে জাতিসংঘকে নেতৃত্ব দিতে হবে *পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে রেখে যেতে হবে

by Nahid Himel

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধ অথবা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা-পালটা নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরী পন্থা কখনো কোনো জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়। তিনি বলেন, বিশ্ববিবেকের কাছে আমার আবেদন-অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ-সংঘাত, নিষেধাজ্ঞা আরোপ বন্ধ করুন। গত শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

সংকট ও বিরোধ নিরসনে সংলাপের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান না করে আমরা শান্তি বজায় রাখতে পারি না। শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। নিষেধাজ্ঞা-পালটা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ ও গোটা মানবজাতিকে শাস্তি দেয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সব মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসংকটে পতিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। মানুষ খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে শিশুরা বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায়। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এ পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের দ্রুত অবসান চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের এ অধিবেশন এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন, সহিংসতা ও সংঘাত, কোভিড-১৯ মহামারির মতো একাধিক জটিল এবং বহুমাত্রিক প্রতিকূলতায় পৃথিবী জর্জরিত। আড়াই বছর পর বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মহামারির বিধ্বংসী প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার হতে শুরু করল, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে একটি সম্মিলিত অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত করে। তিনি বলেন, আমাদের প্রমাণ করতে হবে-সংকটের মুহূর্তে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো জাতিসংঘ। তাই সর্বস্তরের জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনের জন্য জাতিসংঘকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সবার প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ’ গঠন করায় জাতিসংঘের মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসাবে আমি বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব ও সংকটের গভীরতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বৈশ্বিক সমাধান নিরূপণ করতে অন্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকে এ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ মূলত তিনটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে কৌশল নির্ধারণ করেছে। প্রথমত, মহামারি সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে আমরা জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করেছি। দ্বিতীয়ত, অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে কৌশলগত আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেছি এবং তৃতীয়ত, জনগণের জীবিকা সুরক্ষিত রেখেছি। এসব উদ্যোগ মহামারিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস করার পাশাপাশি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সাহায্য করেছে বলে তিনি জানান।

অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু কার্যক্রমের প্রসারের জন্য বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব। জলবায়ু নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়া আর ভাঙার একটি দুষ্টচক্র আমরা অতীতে দেখেছি। আমাদের এখনই এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার জন্য এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ুসহিষ্ণু বদ্বীপে উন্নীত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, মা ও শিশু মৃত্যুহ্রাস, লিঙ্গবেষম্য, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত এক দশকে সাক্ষরতার হার ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছি।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা জাতিসংঘে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত ভৌত অবকাঠামো মজবুত অর্থনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। এজন্য আমরা নদীর তলদেশের টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেমসহ টেকসই বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ করছি। আমাদের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থায় ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’ যুক্ত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজতর করবে এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে। এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক দুই তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি দায়িত্বশীল সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে, বাংলাদেশ তার জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অধিকার নিশ্চিতে সামগ্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য বিনামূল্যে আবাসন প্রদানের লক্ষ্যে ‘আশ্রয়ণ’ শীর্ষক প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করছি।

সাইবার অপরাধ এবং সাইবার সহিংসতা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক বাধ্যতামূলক চুক্তি প্রণয়নে একসঙ্গে কাজ করার জন্য তিনি সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থার বিষয়ে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। নারী ও অন্যসব পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে টেকসই সমাজ গঠনে সব অঞ্চলের জনগণকে তারা সাহায্য করে যাচ্ছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেক শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মূল কারণগুলোর সমাধান ব্যতীত টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের বর্তমান সভাপতি হিসাবে আমরা সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে বহুমাত্রিক অংশীজনদের একসঙ্গে কাজ করার একটি প্ল্যাটফরম তৈরিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। নারী, শিশু, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডাকে আরও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment