Home জাতীয় বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করেছে ৷৷ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে চরম ভোগান্তি

বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করেছে ৷৷ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে চরম ভোগান্তি

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর  গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনসহ ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে।ধীরে ধীরে অন্যান্য এলাকায়ও বিদ্যুৎ আসতে শুরু করেছে।

৪ ঘণ্টা পর রাজধানী ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। উত্তরা, গুলশান, বারিধারা, মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) সূত্র জানায়, ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। রাজধানীর আরেকটি অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে সরবরাহ শুরু করা হচ্ছে। পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জেরও কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সন্ধ্যার পর তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ঢাকা ও আশেপাশের অঞ্চলে দ্রুত বিদ্যুৎ রিস্টোর (সংযোগ পুরনায় সচল) হচ্ছে। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে এবং ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জের আংশিক এলাকায় সরবরাহ চালু হয়েছে।

উল্লেখ্য,  গতকাল  দুপুর ২টার দিকে দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহসহ দেশের অর্ধেকের বেশি স্থানে একযোগে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে।

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার স্বাভাবিক গতি চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি বাসাবাড়িতে পানি সংকট ও বহুতল ভবনে লিফট বন্ধ থাকায় বেশ কষ্ট পেতে হয় নগরবাসীকে।

মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থাকা রোগীরা নানামুখী ভোগান্তিতে পড়েন। জরুরি বিভাগে এ সমস্যা ছিল প্রকট। রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিনগুলো বিদ্যুতের অভাবে চলছিল না। ওয়ার্ড থেকে হাসপাতাল বারান্দা-টয়লেট কোথাও বিদ্যুৎ নেই। কেউ কেউ মোমবাতি জ্বালিয়ে অবস্থান করছিলেন। আবার অনেকে হাতপাখা দিয়ে রোগীদের বাতাস করছিলেন। চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও নিরাপত্তাকর্মীরা রোগীদের চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।

বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালের সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। বিলের পেমেন্টসহ দাপ্তরিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। অনেক চিকিৎসক চেম্বারে এসে বিদ্যুৎ না থাকায় রোগী না দেখে চলে গেছেন।

ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও স্টোর) ডা. আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, একান্তভাবে যেখানে প্রয়োজন সেখানে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ ও ওটিতে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেনারেটর টানা ১২ ঘণ্টা চলবে, তার পর সম্ভব নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুর থেকেই রাজধানীর সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিক জেনারেটরের মাধ্যমে চালিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়।  এসব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলছেন, দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ না এলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় রোগী স্বজনরা বারান্দায় অবস্থান নেন। সাধারণ ওয়ার্ডগুলো একেবারেই অন্ধকার ছিল। কিছু হাসপাতাল ২ ঘণ্টা জেনারেটর চালিয়ে ২ ঘণ্টা বন্ধ করে আবারো চালু করে রোগীদের সহায়তা করছিল।

এদিকে শুধু হাসপাতাল নয়, আবাসিক এলাকায় বিদ্যুতের অভাবে পানি উত্তোলন না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে পানি সংকট চরমে উঠে। বিদ্যুৎহীনতার মধ্যে বাসাবাড়িতে পানির সরবরাহ না থাকার ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। খাবার পানি থেকে শুরু করে রান্না-বান্না, গোসল আর নিত্যকার কাজে সংকটের মধ্যে পড়েছেন তারা। লিফট বন্ধ থাকায় উঁচু ভবনে উঠানামায়ও কষ্টের মুখোমুখি হয়েছে মানুষ।

পুরান ঢাকার ইসলামপুরের ব্যবসায়ী মিলন চৌধুরীর জানান, পুরান ঢাকা এমনিতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। বেলা ২টার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। সেই থেকেই আতংক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ওই সময় পানি সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয় অযু করে নামাজে যেতে। মসজিদে পানির সংকট দেখা দেয় বিদ্যুৎ যাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। দুপুরের দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় রান্না-বান্না, গোসল করার ক্ষেত্রে বিশেষ সমস্যায় পড়তে হয় বাসিন্দাদের।

সেগুনবাগিচার বেশ কয়েকটি উঁচু ভবনের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক ঘণ্টা ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টার পর আর সম্ভব হয়নি। তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য দেখা দিয়েছে লম্বা লাইন। সেখানেও যথাযথ তেল পাওয়া যাচ্ছিল না। দুপুরের পর থেকেই লোকজন কনটেইনার নিয়ে তেলের জন্য বিভিন্ন তেলের পাম্পে ভিড় জমায়।

হাতিরঝিল এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে বিকাল থেকেই। বিদ্যুৎবিহীন বাসাবাড়ি-ভবনে থাকা সাধারণ লোকজন ঝিলের পাড়ে অবস্থান নেন। সুজন নামের এক বাসিন্দা জানান, তিনি হাতিরঝিল ঢাল পাড় থাকেন। তিনি শুধু নন, প্রায় শতাধিক মানুষ বাসা-বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাতিরঝিলে অবস্থান নেন- একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment