জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির অবস্থান আগের মতোই আছে। তারপরও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধরে রাখতে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেব। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় গাইবান্ধা জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীর ওপর হামলা, ওই ঘটনায় মামলা না নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে প্রতিনিধিদলটি।
চুন্নু বলেন, ‘যদিও আমরা ইভিএমে নির্বাচনের পক্ষে না। গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনটা ইভিএমে হবে। কিন্তু আমাদের পার্টির কালচার হলো নির্বাচন বর্জন না করা। আমরা মনে করি, নির্বাচন বর্জন করলে তা গণতন্ত্রকে ব্যাহত করবে। তাই প্রতিবাদ হিসাবে সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। সেই নির্বাচনের বিষয় নিয়ে কথা বলতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এসেছিলাম।’
ইভিএমের ভোটে সিসিটিভি থাকবে কি না- সে বিষয়ে জানতে চেয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করছি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে। যদিও আমরা নীতিগতভাবে ইভিএমের নির্বাচনের বিরুদ্ধে। তারপরও যদি এই নির্বাচনটা ফেয়ার করতে পারেন। তাহলে মানুষের কিছুটা আস্থা আসতে পারে। নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য করতে কী কী পদক্ষেপ নেবেন, সে বিষয়ে আমরা তাদের বলেছি।’
সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুতে ২৪ জুলাই গাইবান্ধা ৫ সংসদীয় আসন শূন্য হয়৷ ১২ অক্টোবর এ আসনে উপনির্বাচন হবে।
জেলা পরিষদ ভোটের প্রসঙ্গ টেনে চুন্নু বলেন, ‘গাইবান্ধা জেলা পরিষদ নির্বাচনে অনেক এমপি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তাদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার করছেন। আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের প্রার্থীদের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এগুলো নিরসন করার জন্য এবং জেলা পরিষদ ভোটে সব কেন্দ্রে সিসিটিভির ব্যবস্থা করার কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জোর করে ভোট নিয়ে নিওয়ার কথা বলা হচ্ছে। যারা এজেন্ট হবে তাদের এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
চুন্নু আরও বলেন, ‘তারা (ইসি) বলেছেন ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে, সৎ থেকে ভালো নির্বাচন দেয়ার মানসিকতা তাদের আছে। ইচ্ছা আছে। সেই ইচ্ছার প্রতিফলনটা জেলা পরিষদ নির্বাচন এবং গাইবান্ধা ভোটে দেখতে চাই।’
১৭ অক্টোবর ৬১ জেলা পরিষদের ভোটগ্রহণ হবে। এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৭ জন, সংরক্ষিত পদে ১৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৬৮ জন এবং তিন পদে সব মিলিয়ে ১১৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সরাসরি নজরদারি দেখছি না। আমাদের প্রার্থীকে অপমান ও তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ নিয়ে থানা মামলা নেয়নি। সেখানে জিডি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপ আমরা দেখছি না।’
চুন্নু বলেন, ‘সিইসি বলেছেন, আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে খুবই অনড় ও শক্ত অবস্থানে তারা। এখন পর্যন্ত সংসদের উপনির্বাচনে সিসিটিভি ব্যবহার করার কথা রয়েছে তবে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিসিটিভি ব্যবহারের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী কমিশন সভায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিসিটিভির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
সিইসিকে ভালো মানুষ উলেখ করে চুন্নু বলেন, ‘তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে ওনারা কী করেন সেটা দেখব।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো নির্বাচন শতভাগ ফেয়ার হয়েছে বলে কেউ বলতে পারবে না। যখন যে দল নির্বাচনে জিতে, তখন তারা বলে নির্বাচন ফেয়ার হয়েছে এবং বাকিরা বলে নির্বাচন ফেয়ার হয়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রমাণ করেছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও নির্বাচন ফেয়ার হয় না। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমরা বলছি, বর্তমান সিস্টেমে নির্বাচন ফেয়ার করা সম্ভব না। একমাত্র নির্বাচন সিস্টেম যদি পরিবর্তন করা হয়, যদি আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়; তাহলেই শতভাগ ফেয়ার নির্বাচন করা সম্ভব। তবে আমরা চাই বেশির ভাগ নির্বাচন ফেয়ার হোক।’
জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘এই পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে আমরা সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থায় আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আমরা অংশগ্রহণ করছি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে প্রতিষ্ঠিত করতেই আমরা এটা করি।’