চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী শেখ রাসেল দিবসে ‘দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ এই স্লোগানকে ধারণ করে বলেন, শহীদ শেখ রাসেল আমাদের কাছে বেদনার এক মহাকাব্য। শেখ রাসেল আবেগ, শুন্যতা ও ভালবাসায় জড়ানো একটি নাম।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চসিকের উদ্যোগে শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে মেয়র মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মেয়র বলেন, ৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকারীরা শিশু ও নারীদের প্রতিও সামান্যতম দয়ামায়া দেখায়নি। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল সেদিন ঘাতকদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিল। এতে প্রমাণিত হয় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও বর্বর ঘাতক। তিনি বলেন, ঘাতকের নির্মম আঘাত শুধু শেখ রাসেলই নয়, দেশের কোটি কোটি শিশুর হৃদয়কে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। সেদিন মানবিক, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক সনদ, জাতিসংঘের শিশু সনদ এবং ইসলামে শিশু অধিকার সব কিছুকেই কলঙ্কিত করা হয়েছিল। রাসেল সকল শিশু-কিশোরদের কাছে জাগরুক হয়ে থাকবে। মেয়র বলেন, রাসেলের রক্তের ঋণ পরিশোধের মধ্য দিয়ে আমাদের শিশুদের জন্য নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু। আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, সমাজকল্যাণ স্ট্যন্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, মোহাম্মদ ইসমাইল, আবুল হাসনাত মো. বেলাল, আবদুল মান্নান, নুরুল আমিন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসী, শাহীন আক্তর রোজী, সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, কুসুম কুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চম্পা মজুমদার।
আলোচনা শেষে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী চসিক পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০৮ ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে মেয়র মেধাবৃত্তির পুরস্কার ও রচনা-চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন।
এছাড়া সকালে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন সম্মেলন কক্ষে খতমে কোরআন, মিলাদ ও দোয়া এবং চসিক চত্বরে শেখ রাসেরের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে সিটি মেয়রের নেতৃত্বে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবমাতা শেখ ফজিলাতুনন্নেছা মুজিবের কনিষ্ঠ সন্তান শহীদ শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন পালনোপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা আজ মঙ্গলবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, দেশ-বিদেশে বিএনপি-জামাত ও তথাকথিত সুশীলরা বাংলাদেশের মানবাধিকার গেল গেল বলে হৈ-চৈ শুরু করে দিয়েছেন। এর মধ্যেও বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ১৬০ ভোট পেয়ে সদস্য নির্বাচিত হওয়াটা যারা মানবাধিকার গেল বলে হৈ-চৈ করছে তাদের গালে শক্ত এক চপেটাঘাত। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৯ জন সদস্যসহ অবুঝ শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়েছে। এই জঘন্য অপরাধ আর পৃথিবীর বুকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম. নাছির উদ্দীন বলেন, অবুঝ ও নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলকে কোন পাপ স্পর্শ করেনি। তার বয়স ১১ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ঘাতকরা পিতা-মাতা, ভাই-ভাবীদের লাশ ডিঙিয়ে তাকে খুন করার ঘটনাটি ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি নৃশংস ঘটনা। বঙ্গবন্ধু পরিবারে তিনি ছাড়া আর কেউ সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না। তারপরও দুর্বিনীত বর্বর ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর রক্তকে ভয় পায় বলেই অবুঝ শিশু রাসেলকে ঠা-া মাথায় হত্যা করেছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোটবোনকে নিয়ে মাত্র ১৫ দিন আগে জার্মানিতে চলে গিয়েছেন বলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। আমাদের সৌভাগ্য তিনি আজ বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছেন।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, উপদেষ্টা শেখ মো. ইসহাক, সম্পাদক ম-লীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসান মাহমুদ শমসের, এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মো. হোসেন, হাজী জহুর আহমদ, দিদারুল আলম চৌধুরী, জোবাইরা নার্গিস খান, আব্দুল আহাদ, আবু তাহের, শহিদুল আলম প্রমুখ।
আলোচনা সভার আগে মঞ্চে শহীদ শেখ রাসেলের রুহের মাগফেরাত কামনায় খতমে কোরআন, দোয়া-মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোনাজাত পরিচালনা করেন দারুল ফজল মসজিদ মার্কেটের পেশ ঈমাম মাওলানা ফজল কবির।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ : চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক এমএ সালাম বলেছেন, শেখ রাসেল রাজনীতি করতেন না। কিন্তু ছোটকাল থেকে তার আচার আচরণে অনেক নেতৃত্বগুণ পরিলক্ষিত হতো, সেটা খুনিরা আঁচ করতে পেরেছিল বলেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বেঁচে থাকলে আজ দেশের নেতৃত্ব দিতেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের ৫৯ তম জন্মদিনে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো আতাউর রহমান বলেন, শেখ রাসেলকে হত্যা করে খুনিরা বিশ্বের জঘন্যতম কীটে পরিণত হয়েছে।
সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় আজ সকালে দোস্ত বিল্ডিং কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সহ সভাপতি অধ্যাপক মো মঈনুদ্দিন, মো আবুল কালাম আজাদ, নবনির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবলু, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক নাজিম উদ্দিন তালুকদার, বন ও পরিবেশ সম্পাদক আবু তালেব প্রমুখ।
previous post