বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেই রাজপথ দখলের লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ।
বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশ শেষে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। আর ডিসেম্বরেই রাজপথ দখলে রাখতে মাঠে নামবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। দুই দলের এই লড়াইয়ে চাপে সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, বৈশ্বিক অস্থিরতায় আমরা এমনিতেই চাপে আছি। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে উৎপাদন দিন দিন নেমে যাচ্ছে। ঠিকমতো শিপমেন্ট করতে না পারার কারণে ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছে। তাদের চাহিদাও দিন দিন কমেছে। এই সংকটের মধ্যে যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা যুক্ত হয়, তাহলে আমাদের মহাসংকটে পড়তে হবে। আমি রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ করব, সংকটকালীন এই সময়ে আপনারা যে কর্মসূচি দেন না কেন, সেটা যেন একটু চিন্তা-ভাবনা করে দেয়া হয়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলার ও জ্বালানি সংকট এবং বৈশ্বিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনীতি এখন টালমাটাল। সাধারণ মানুষ পড়েছে জীবন-জীবিকার চাপে। এমন বিপদসংকুল সময়ে রাজনৈতিক সংঘাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই সাধারণ মানুষকে রক্ষায় বিশিষ্টজনেরা রাজনৈতিক উদারতা ও ঐকমত্যের পক্ষেই কথা বলেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, দুই রাজনৈতিক শক্তির ক্ষমতার লড়াইয়ে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়েছে। তারা কেউ মানুষের কথা ভাবছে না। এক দল ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে, আরেক দল ক্ষমতায় যেতে চাইছে। কষ্টে থাকা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট ও যুদ্ধে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। রয়েছে বিদ্যুৎ সংকট, ডলার সংকট, কর্মসংস্থানের সংকট। সব সংকট যখন সাধারণ মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে, তখন দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতার কাড়াকাড়িতে ব্যস্ত। আর তাতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন। রাজনৈতিক দলের বাইরে থাকা নাগরিক সমাজকে ভূমিকা নিতে হবে। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কিছুতেই দেখতে চাই না।
পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যাচ্ছে, তা প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বক্তব্যে স্পষ্ট। রোববার তিনি বলেছেন, সাশ্রয়ী হওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রয়োজনে দিনের বেলা বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ করেই দিতে হবে।
বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। । ঢাকা নগরেই আট ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। কলকারখানার উৎপাদন কমেছে। রপ্তানি নিম্নমুখী। রেমিট্যান্স কমছে। নিত্যপণ্যের দামে মানুষ দিশেহারা। ঋণের জন্য আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছে যেতে হয়েছে। রাজনৈতিক সংঘাতে স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ও যোগাযোগ ব্যাহত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। অর্থনীতিকে সুরক্ষা দিতে সকল পক্ষের ঐকমত্যের কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদেরা।
কিন্তু নেতাদের কাছ থেকে ঐকমত্যের আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার পতনে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।