Home জাতীয় বিএসএফের বাধায় ঝুলে আছে আখাউড়া লাকসাম রেলপথ নির্মাণ

বিএসএফের বাধায় ঝুলে আছে আখাউড়া লাকসাম রেলপথ নির্মাণ

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধার কারনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিমান্তে দুই বছর যাবত বন্ধ রয়েছে রেলওয়ের দু’টি স্টেশন ও একটি সেতুর নির্মাণ কাজ। তাই প্রায় ৮৬ শতাংশ কাজ হলেও নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি। বিষয়টি সমাধানে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একাধিকবার ভারতের হাইকমিশনারকে জানানো হলেও কোন কাজ হয় নি বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করার কাজ ২০১৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ৬ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। গত ৮ বছরে তিন দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও নির্ধারিত সময় কাজ শেষ হওয়া এখনো অনিশ্চিত। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে ভারতীয় বিএসএফ’র বাধা ও নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে ঠিকাদারের পক্ষ থেকে প্রকল্পের ব্যয় এবং সময় আরেক দফা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধিতে দাতা সংস্থা রাজি হচ্ছে না বলে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ ডুয়েলগেজ লাইনের কাজ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার সহ যৌথ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান (সিটিএম জয়েন্ট ভেঞ্চার)। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ৪ হাজার ১১৮ কোটি ১৪ লাখ ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) ঋণ দিচ্ছে ১ হাজার ৩৫৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাকি ১ হাজার ২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জনকণ্ঠ’কে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরো রেলপথ ডাবল লাইন হয়ে যাবে আখাউড়া-লাকসাম অংশটুকু হয়ে গেলে। এই প্রকল্পের প্রায় ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকার যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ভারতের বিএসএফ’র বাধার কারণে প্রকল্পের সালদা নদী ও কসবা এই দুই স্টেশন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। সমস্যা সমাধানে স্বরাষ্ট্র  ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক বৈঠক হলেও কোন সমাধান হয় নি। প্রায় দুই বছর যাবত প্রকল্পের সালদা নদী স্টেশনের নিকটবর্তী ২৬১ নাম্বার সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। বিএসএফ’র বাধার কারণে গত বছর ২৫ মার্চ থেকে সালদানদী স্টেশন নিকটবর্তী একটি সেতুরও কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া কসবা স্টেশনের কাজ এখন পর্যন্ত শুরু করা যায় নি বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক শহীদুল ইসলাম জনকণ্ঠ’কে বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কসবা এলাকায় ভারতের বিএসএফ’র কারণে প্রায় দুই বছর যাবত বন্ধ রয়েছে দুই স্টেশন ও একটি সেতুর নির্মাণ কাজ। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৭ আগষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন সমাধান হয় নি। তাই কাজ করতে না পারায় সিমান্ত এলাকায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। এ সব কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের মেয়াদ কিছু বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। তবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না। বরং কিছু টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ডাবল লাইন, দুটি স্টেশন ও সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। শূন্যরেখার ১৫০ গজের ভেতর কাজ হচ্ছে এমন অভিযোগ বিএসএফের। তাদের বাধার মুখে গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে এই নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এতে মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, নির্দিষ্ট সময়ে তারা কাজ শেষ করতে পারবে না।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলজংশন থেকে লাকসাম রেলজংশন পর্যন্ত ডাবল লাইনের কাজ চলছে। আখাউড়া থেকে শশীদল পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ, ৬টি রেলওয়ে স্টেশন, ব্রিজ, কালভার্ট তৈরির কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন।

রেললাইন নির্মাণকাজের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলছে রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের কাজ। কসবা রেলওয়ে স্টেশন ও সালদানদী রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণকাজ শুরু করে প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ হওয়ার পর কাজে বাধা দেয় বিএসএফ। সীমান্তের শূন্যরেখার ১৫০ গজের ভেতর কাজ হচ্ছে এমন অভিযোগ তাদের। বাধার মুখে কসবা রেলওয়ে স্টেশন, সালদানদী রেলওয়ে স্টেশন ও একটি রেলসেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। কসবা রেলওয়ে স্টেশন ও সালদানদী রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণকাজ শুরু করে প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ হওয়ার পর কাজে বাধা দেয় বিএসএফ। সীমান্তের শূন্যরেখার ১৫০ গজের ভেতর কাজ হচ্ছে এমন অভিযোগ তাদের।

বিষয়টি সমাধানের জন্য গত বছর স্থানীয় সাংসদ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, ভারতীয় তৎকালীন হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে জটিলতা নিরসনে আলোচনা হলে গত বছর ২৪ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় কসবার রেলস্টেশন, সালদানদী ব্রিজ ও সালদানদী রেলস্টেশনের কাজ। কাজ শুরু হওয়ার তিন দিনের মাথায় পুনরায় বিএসএফ কসবা রেলস্টেশন ও সালদানদী রেলস্টেশন নির্মাণের কাজে বাধা দিলে কাজ বন্ধ রাখেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশনের লোকজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় তাদের অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। বিষয়টি সমাধানের জন্য রেলওয়ে মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে চেষ্টা চলছে। সমস্যা সমাধান হলে নির্মাণকাজ শেষ করতে কমপক্ষে আরও আট মাস সময় লাগবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের লাকসাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার অংশে ডাবল লাইনের উন্নতিকরন কাজ শেষ হয়েছে। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যস্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের অধিনে এই অংশের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে এই অংশটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। বাকীয় অংশের কাজ এখনো চলমান আছে। ব্যস্ততম রেলপথে কাজ করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

তিন দফা সময় বৃদ্ধি 
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের ১১৮ কিলোমিটার আগে থেকেই ডাবল লাইন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে আরো ১৩১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়াল গেজ লাইনে উন্নীত করার জন্য ‘লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্পটি’ নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।

২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। এ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কভিড-১৯-এর কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও সময়ক্ষেপণের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে তা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়। সেটাও সম্ভব হয় নি। বর্তমানে প্রকল্পে মেয়াদ ২০২৩ সালে জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরেক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

 

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment