নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায় দেশের বাম প্রগতিশীল ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলো। দল বা জোটে ভিন্ন অবস্থানসহ নিজেদের মধ্যে নানা ইস্যুতে টানাপোড়েন আছে। এরপরও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে বাম-প্রগতিশীল ঘরানার প্রায় সব দলের নেতারা অভিন্ন সুরে কথা বলছেন। তাদের মতে, আগে প্রয়োজন নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা, তারপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি। এজন্য প্রয়োজনে তারা অপরাপর রাজনৈতিক দল, জোট এবং শক্তির সঙ্গে যুগপৎভাবে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার কথাও ভাবছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে শরিকরা বাদে বাকি সবাই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে কমবেশি সোচ্চার। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা দীর্ঘদিন ধরে এ দাবিতে মাঠে। গণতন্ত্র মঞ্চও একই দাবিতে মাঠে নেমেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-এই দুই জোটের বাইরে থেকে অভিন্ন দাবিতে বহুদিন ধরে রাজপথে সরব এবং সক্রিয় বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিকরাও। কোনো জোটেই নেই-বাম প্রগতিশীল ঘরানার এমন দলগুলোও এই দাবি আদায়ে ইতোমধ্যে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর সঙ্গে মঙ্গলবার যুগান্তরের কথা হয়। তিনি বলেন, সরকারি দল ও তাদের সুবিধাভোগী ছাড়া দেশের সব দল, জোট, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন, সাধারণ মানুষ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায়।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ জোটে থেকে, কেউ এককভাবে এই দাবিতে ঘরে-বাইরে সোচ্চার। সময় যতো এগিয়ে আসবে, এটি দ্রুত গণদাবিতে রূপ নেবে। সব পথ ও মতের মানুষ এক মোহনায় মিলিত হবে। দাবি আদায়ে রাজপথে নামবে। মূলত মানুষ তার হারানো ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতেই আবার এক হবে। এ জন্য হয়তো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে-দেশের বাম প্রগতিশীল ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা তা বিশ্বাস করেন না। একই ধারণা তাদের বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষেত্রেও। তাই নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে এক হয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিরোধী শিবিরের এ দলগুলো। কৌশলগত কারণে বড় কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামা সম্ভব না হলেও যুগপৎভাবে তারা অভিন্ন দাবি নিয়ে রাজপথে থাকার কথা ভাবছে। এজন্য ভেতরে ভেতরে আলাপ-আলোচনাও চলছে। এমনকি আন্দোলনে নামার রূপরেখা প্রণয়নেরও কাজ শুরু হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট এই মুহূর্তে বাম-প্রগতিশীল ঘরানার বড় রাজনৈতিক জোট। ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই আত্মপ্রকাশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। শুরুতে আটটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত এই জোট থেকে চলতি বছরের ২৪ মে গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। এখন এই জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে আছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-মার্কসবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। এই জোটের শরিক নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কারও সঙ্গেই যুক্ত না হয়ে তারা সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায়ে বৃহৎ আন্দোলন করতে মাঠে আছে, থাকবেন।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রধান শর্ত তদারকি সরকারের কাছে এই সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আমরা আগে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের বাইরে সাতটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিয়ে সম্প্রতি গঠিত হয় নতুন জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। মঞ্চের শরিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে-জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র ও সংস্কার আন্দোলন। এই জোটের নেতারাও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা মাঠের বড় শক্তি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে একাধিক কর্মসূচিও পালন করেছেন। জোটের বাইরে এককভাবে পথ চলা গণফোরামের দুই অংশ, বাংলাদেশ জাসদসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে কর্মসূচি দেবে বলে জানা গেছে।