দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের চিকিত্সায় একটি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাফল্যের আভাস পেয়েছেন গবেষকরা। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিশেষ কোষের রূপ বদলে দিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমারকে আক্রমণের কৌশল বের করেছেন তাঁরা।
নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণাটি বর্তমানে কিছুটা প্রাথমিক অবস্থায়ই আছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই চিকিত্সাপদ্ধতির কার্যকারিতা চূড়ান্তভাবে মূল্যায়নে আরো সময় লাগবে।
এ চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। তবে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে নতুন প্রযুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই মনে করা হচ্ছে।
নতুন প্রযুক্তিটি প্রয়োগ করা হয়েছে ১৬ জন রোগীর ওপর। এই গবেষণায় প্রত্যেক রোগীর টিউমারের নির্দিষ্ট দুর্বল স্থানটি চিহ্নিত করে সবার জন্য পৃথক চিকিত্সাব্যবস্থা তৈরি করা হয়। এ পদ্ধতিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার টি-সেল নামের কোষটি নিয়ে কাজ করা হয়। টি-সেল শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘুরে অন্য কোষগুলোতে কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে কি না, তা খুঁজে বেড়ায়। বিজ্ঞানীরা টি-সেলের রূপান্তরে রিসেপ্টর নামের একটি প্রোটিন ব্যবহার করেন, যেগুলো ক্যান্সারে পরিণত হওয়া কোষগুলোকে খোঁজে।
টি-সেলে এমন পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট জিনগত রূপান্তরের প্রয়োজন। জিন পরিবর্তনের এমন প্রযুক্তির নাম সিআরআইএসপিআর। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্যই ২০২০ সালে রসায়নে নোবেল পান দুই বিজ্ঞানী।
নতুন চিকিত্সাপদ্ধতিটির মূল ধারণা হলো ক্যান্সার খুঁজে বের করা টি-সেলের মাত্রা বৃদ্ধি করা। প্রতিটি টিউমার স্বতন্ত্র হওয়ায় প্রত্যেক রোগীর জন্য পৃথকভাবে চিকিত্সাপদ্ধতি তৈরি করতে হয়।
অন্য কোনো চিকিত্সায় সুস্থ করা যায়নি কোলন, স্তন ও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত—এমন কিছু রোগী নিয়ে এই প্রযুক্তির প্রাথমিক পরীক্ষাটি করা হয়।
গবেষকদলের সদস্য ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্তোনি রিবাস বলেন, এটি ক্যান্সারের বিশেষ চিকিত্সা বিকাশের ক্ষেত্রে একটি অগ্রগতি।
বার্সেলোনার ক্লিনিক হাসপাতালের ইমিউনোলজি সার্ভিসের প্রধান ডা. মানেল হুয়ান বলেন, এটি এক অসাধারণ কাজ এবং নিঃসন্দেহে এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি।
যেভাবে কাজ করে : প্রথমে গবেষকরা রোগীর রক্ত থেকে ক্যান্সারের সন্ধান দিতে পারে এমন রিসেপ্টরওয়ালা টি-সেল খুঁজে বের করেন। তারপর ক্যান্সার খুঁজে পায়নি এমন টি-সেল সংগ্রহ করেন। দ্বিতীয় ধরনের টি-সেলগুলোতে অন্যান্য সমস্যা বা সংক্রমণ খুঁজে বের করা যেসব রিসেপ্টর থাকে, সেগুলোকে ক্যান্সারসন্ধানী টি-সেল দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। রূপান্তরিত টি-সেলগুলোকে শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যাতে তারা টিউমার খুঁজে পেতে পারে। তার পরই সক্রিয় হয়ে ওঠে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সূত্র : বিবিসি