Home রাজনীতি বিএনপির গণসমাবেশ কাল ৷৷ সিলেটে দুদিন আগেই মাঠে নেতাকর্মীরা

বিএনপির গণসমাবেশ কাল ৷৷ সিলেটে দুদিন আগেই মাঠে নেতাকর্মীরা

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ কাল। পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে দুদিন আগেই শহরে হাজির হয়েছেন হাজারো নেতাকর্মী। ধরপাকড় ও হয়রানি এড়াতে তারা হোটেল-মোটেলে ওঠেননি। অনেকে নগরীর বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে উঠেছেন। সেখানে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ কেউ উঠেছেন আত্মীয়-পরিচিতজনের বাসায়। অনেকে সরাসরি সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে তাঁবু টানিয়ে রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে স্থানীয় বিএনপি নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা দূর-দূরান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সমাবেশস্থল সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির একটি দল। এ সময় সেখানে শত শত নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে মাঠে থাকছে সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য ও ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া নগরীর ভেতর ও বাইরে ১৯টি চেকপোস্ট করা হয়েছে।
এদিন সন্ধ্যায় নগরীতে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ ব্যাপক শোডাউন করে। এতে নগরীতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপির গণসমাবেশ বানচালের অপচেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির সমাবেশের দিন কাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট জেলায় এবং আজ সকাল থেকে কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি। বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, ধর্মঘট, গ্রেফতার, হয়রানি, পথে পথে বাধা-সব উপেক্ষা করে গণসমাবেশসফল করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দলে দলে নেতাকর্মীরা সিলেটে আসছেন। নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে শহরের সড়কগুলোর দুপাশ। বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের জন্য মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশস্থলের পাশে শামিয়ানা টানিয়ে আলাদা আলাদা ক্যাম্প করা হয়েছে। যাতে কর্মীরা সমাবেশস্থলেই থাকতে পারেন। এছাড়া নগরীর বেশ কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টারেও নেতাকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সমাবেশস্থলে ছিটানো হয় মশক নিধন ওষুধ। বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য মাঠে ফ্রি পানি বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ সকাল থেকে বিভাগের তিন জেলা সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে পরিবহণ ধর্মঘট থাকায় বৃহস্পতিবার রাতেই এসব জেলার নেতাকর্মীরা সিলেটে রওয়ানা দেন।
এদিন সিলেট আসে বিএনপির কেন্দ্রীয় একটি দল। এ দলে ছিলেন গণসমাবেশের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেড জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। সিলেট এসেই তারা গণসমাবেশের স্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এখন দেশের মানুষ পরাধীন। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। মানুষ আমাদের সহযোগিতা করছেন। আমরা বিশ্বাস করি এবার আওয়ামী দুঃশাসনের পরিসমাপ্তি হবে। এ সময় সিলেটকে লাকি সেভেন উল্লেখ তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৬টি সমাবেশ করেছি। এতে দেশের মানুষ অংশ নিয়েছেন। শাহজালালের মাটিতে আমরা ৭ম সমাবেশ করছি। কারণ এই মাটি পবিত্র। ইনশাআল্লাহ এই পবিত্র মাটিতে সমাবেশ সফল হবে।
এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী লুনা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, কেন্দ্রীয় সদস্য সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী জানান, মাঠের ৯০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ। বিভিন্ন স্থান থেকে আগেই চলে আসা মানুষের রাতযাপনের জন্য যে ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে তা শনিবার ভোরেই সরিয়ে ফেলা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু সরকার ভয়ভীতি দেখিয়ে পরিবহণ ধর্মঘটের ঘোষণা আদায় করেছে। সেই কারণে নেতাকর্মীরা আগেই চলে এসেছেন। শত বাধার পরও সমাবেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও গণসমাবেশের প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির আহবায়ক আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী অভিযোগ করেন, বেশ কয়েকটি জায়গায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে গণসমাবেশ বানচালের চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। তবে যত বাধাই আসুক, সমাবেশ সফল হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি জানান, গত কয়েকদিনে বিএনপির অন্তত ২০ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ নানা অভিযোগে আটক করেছে। এছাড়া বিভাগের অন্তত ১০টি স্থানে প্রচারাভিযানে পুলিশ ও ছাত্রলীগ বাধা দিয়েছে এবং কয়েকটি মামলা করেছে।
তবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ বানচালের সঙ্গে দলের কারও সম্পৃক্ততা নেই। সমাবেশের নামে কেউ জানমালের ক্ষতিসাধন বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সহ্য করা হবে না বলে জানান তিনি।
এদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে মাঠে থাকবে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ যুগান্তরকে বলেন, পুলিশ কারও গণতান্ত্রিক অধিকারে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না। যেহেতু শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য সরকার অনুমতি দিয়েছে, সেটা যাতে শান্তিপূর্ণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে এবং নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সমাবেশের সুযোগ নিয়ে কেউ যদি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় তা কঠোর হস্তে দমন করতে মাঠে থাকবে সহস্রাধিক পুলিশ। তিনি জানান, নগরীতে যাতে কেউ কোনো ধরনের বিস্ফোরকসহ কোনো কিছু নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নগরীর প্রবেশমুখসহ ১৯টি স্থানে চেকপোস্ট থাকবে আজ রাত থেকেই। ইতোমধ্যে ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়েছে। ঘটনার দিন গুরুত্বপূর্ণ ৫টি পয়েন্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্বপালন করবেন।
হোটেল-মোটেল ফাঁকা : গণসমাবেশ ঘিরে স্থানীয় হোটেল-মোটেলে নেতাকর্মীদের ভিড় হবে বলে ধারণা করা হলেও তেমনটি হয়নি। ধরপাকড় ও হয়রানি এড়াতে কৌশল অবলম্বন করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। দূর-দূরান্ত থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরা হোটেল-মোটেলে ওঠেননি। তারা হয় সমাবেশ মাঠে অথবা কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতজনের বাসায় উঠেছেন। সিলেটের একাধিক হোটেলের ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকরা বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার সকালে ওঠেন। তবে এবার শহরের হোটেলগুলোর অধিকাংশই ফাঁকা। গণসমাবেশের কারণে অনেকে সিলেটে বেড়াতে আসেননি বলে ধারণা করছেন তারা।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment