সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন, মাস, বছর পেরিয়ে আবারও দুয়ারে বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ক্রীড়া আসরের পর্দা উঠছে আজ। বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরই শুরু হবে সোনার ট্রফি জয়ের ধুন্ধুমার লড়াই। বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১০টায় স্বাগতিক কাতার ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর খেলবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। ‘এ’ গ্রুপের এই ম্যাচটি হবে কাতারের রাজধানী দোহার আল খোরের আল বায়াত স্টেডিয়ামে। দুটি দলই জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরুর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
এই প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ হিসেবে কাতারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ^কাপ। সেই সুবাদে কাতার সরাসরি বিশ^কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। যা তাদের ইতিহাসে প্রথম। অন্যদিকে আট বছর অর্থাৎ দুই আসর পর ফের বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে ফিরেছে ইকুয়েডর। কাগজে-কলমে স্বাগতিকদের থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে আছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি। লিওনেল মেসি-নেইমারদের অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের কঠিন চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে ইকুয়েডর চতুর্থ স্থান পেয়ে বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছে। যে কারণে কাতারের বিরুদ্ধে বাজিকরদের দৃষ্টিতেও ৭/৫ ব্যবধানে এগিয়ে আছে ইকুয়েডর।
এর আগে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে নিজেদের মাঠে তিনবার খেলেছে কাতার। এর মধ্যে একটি করে ম্যাচে জয়, পরাজয় ও ড্র করেছে। আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে শেষ প্রীতি ম্যাচে ফরোয়ার্ড আহমেদ আয়েলদিন ইনজুরিতে পড়েন। এই চোট ছাড়া আপাতত কোনো ঝুঁকি নেই কাতারের তাঁবুতে। তাছাড়া স্বাগতিক হিসেবে ঘরের মাঠের বাড়তি সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে প্রস্তুত তারা। ইতিহাস জানান দিচ্ছে, বিশ^কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে এখন পর্যন্ত কোন স্বাগতিক দল পরাজিত হয়নি।
গত পাঁচ বছর স্প্যানিশ কোচ ফেলিক্স সানচেজের অধীনে কাতার নিজেদের ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছে। এখন বিশ্বমঞ্চে নিজেদের প্রমাণের পালা। দেশটির লক্ষ্য স্বাগতিক হিসেবে নিজেদের সেরাটা দিয়ে ক্রীড়াবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এত বড় আসরে অতীতে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় তাদের ভালো করা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ‘এ’ গ্রুপে কাতারের বাকি দুই প্রতিপক্ষ আফ্রিকান নেশন্স কাপের চ্যাম্পিয়ন সেনেগাল ও বিশ্বকাপের তিনবারের রানার্সআপ হল্যান্ড।
এই দুই দেশের বিরুদ্ধেও নিজেদের সেরা খেলা উপহার দিতে চান কাতারের ফুটবলাররা। ২০০২ বিশ্বকাপে তখনকার চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে উদ্বোধনী ম্যাচে হারিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল সেনেগাল। এবার ২০ বছর পর বিশ্বকাপে অভিষিক্ত দল হিসেবে ওই রেকর্ডের পুনরাবৃত্তি করতে চায় কাতার।
স্বাগতিক দেশ হিসেবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বাজে পারফরমেন্সের রেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০১০ সালে নিজেরা বিশ্বকাপ আয়োজন করে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল আফ্রিকানরা। এবার আফ্রিকার সেই বেদনার রেকর্ড স্পর্শ করতে চায়না কাতার। বরং ভালো খেলে নিজেদের নামটি ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করতে বদ্ধপরিকর। ইকুয়েডরকে হারাতে পারলে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) একমাত্র দেশ হিসেবে বিশ^কাপে কোন ম্যাচ জয়ের ইতিহাস গড়বে কাতার।
চোখ ধাঁধানো ফর্ম সঙ্গী করে বিশ্বকাপে এসেছে ইকুয়েডর। বিশ্বকাপের আগে তারা খেলেছে পাঁচটি প্রস্তুতি ম্যাচ। এই ম্যাচগুলোতে একটি গোলও হজম করেনি। সবশেষ ম্যাচে ইরাকের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে। দুই বছর আগে দলের দায়িত্ব পাওয়া আর্জেন্টাইন কোচ গুস্টাভো আলফারোর অধীনে ইকুয়েডর আছে দারুণ চনমনে মেজাজে। তবে উদ্বোধনী ম্যাচের আগে বেশ গুরুতর সংবাদ রটেছে।
মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত ব্রিটিশ গবেষণা কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রধানের নাম আমজাদ তাহা। তিনি বলেন, ইকুয়েডরের আটজন খেলোয়াড়কে ঘুষ দিয়েছে কাতার। ঘুষের পরিমাণ ৭.৪ মিলিয়ন ডলার। ম্যাচে দুই অর্ধ মিলিয়ে ১-০ গোলে হারতে হবে ইকুয়েডরকে। কাতার ও ইকুয়েডরের মোট পাঁচজন খেলোয়াড় এই খবরের সত্যতা যাচাই করেছে। তবে আমি আশা করছি এটা মিথ্যা খবর।