বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) এর বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলন-২০২২ গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসময় সারাদেশ থেকে পাঁচ নারী পুলিশকে পুলিশ উইমেন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর রাজারবাগের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে বুধবার দুপুরে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পুরস্কার পাওয়া সেরা পাঁচজন নারী সদস্যদের মধ্যে স্থান পেয়েছেন নিজের জীবন বাজি রেখে অস্ত্র, গুলি ও বোমাসহ সন্ত্রাসীদের আটক করা সার্জেন্ট রেকসানা খাতুন।
নারী পুলিশ সদস্যরা পুলিশ বিভাগে অনন্য সাধারণ কাজের স্বীকৃতিরূপ কমিটি চূড়ান্তভাবে সারাদেশ থেকে ৫জন নারী পুলিশকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করেছেন। এরমধ্যে ১ জন পুলিশ পরিদর্শক, ১ জন এসআই, ১ জন সার্জেন্ট, ১ জন এএসআই এবং ১ জন কনষ্টেবল রয়েছেন।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ডিআইজি এবং পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি আমেনা বেগম।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা নারী পুলিশ সদস্যরা হলেন, উত্তরা এপিবিএনের পুলিশ পরিদর্শক (অ্যাডজুটেন্ট) সেলিনা আক্তার, বগুড়ার কাহালু থানার নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্কের এসআই (নিরস্ত্র) মোছা: রোজিনা খাতুন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সার্জেন্ট হিসেবে কর্মরত মাগুরার জেলার মেয়ে রেকসানা খাতুন, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এএসআই (নিরস্ত্র) ময়না রানী সরকার এবং জাতীয় জরুরী সেবা-৯৯৯ (বর্তমানে পল্টন থানা), ডিএমপিতে কর্মরত কনষ্টেবল রূপা রানী বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, খুলনার সার্জেন্ট রেকসানা থাতুন চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারিতে নিজের জীবন বাজি রেখে ২টি রিভলবার, ১১ রাউন্ড গুলি ও বোমাসহ সন্ত্রাসীকে হাতেনাতে আটক করেন।
ওই দিন সন্ধ্যায় নগরীর সরকারী মহিলা কলেজের সামনে (বয়রা গার্লস কলেজ) সাইদুর রহমান শাওন নামে এক যুবককে লক্ষ্য করে মোটরসাইকেল থেকে সন্ত্রাসীরা গুলি করার সময় সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সার্জেন্ট রেকসানা দুই কনস্টেবলসহ দৌড়ে গিয়ে সন্ত্রাসী কালা চাঁন ওরফে সবুজকে (৩৫) জাপটে ধরেন।
এসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি অত্যাধুনিক বিদেশি রিভলবার, একটি পিস্তল ও ১১ রাউন্ড গুলি ও হাত বোমা। পরে খালিশপুর থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়।
এক মাসে ২০৪ নারী-কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার
অন্যদিকে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে ২০৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৮ কন্যাশিশুসহ ৪৩ জন। আর তাদের মধ্যে ছয় কন্যাশিশুসহ ১২ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাশিশুসহ দুজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ছয় কন্যাশিশুসহ আটজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য সংগ্রহ করে তারা। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের নভেম্বর মাসে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১০ কন্যাশিশু। উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে ১১ কন্যাশিশু। পাঁচ নারী ও কন্যাশিশু পাচারের শিকার হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে একজন। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে আটজন। তাদের মধ্যে একজনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩ জন। পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে তিনজন। দুজন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন গৃহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে ছয় কন্যাশিশুসহ ৩৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ১১ কন্যাশিশুসহ ২৪ জনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ৯ কন্যাশিশু অপহরণের শিকার হয়েছে এবং একজন কন্যাশিশু অপহরণের চেষ্টার শিকার হয়েছে। তিনজন কন্যা সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচজন কন্যাসহ ১০ জন বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।