পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পুলিশ সদর দপ্তরে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশস্থলের জটিলতা নিরসনে তারা কথা বলেন।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর নেতৃত্বে গতকাল দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রবেশ করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
চার সদস্যের বিএনপির প্রতিনিধি দলের অন্যরা হলেন— দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এবং আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। রাজনৈতিক নিপীড়নমূলক বেআইনি, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা বন্ধ এবং দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণে আইজিপিকে চিঠিও দিয়েছেন তারা।
পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে দেখা করে বিএনপির প্রতিনিধি দল মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ চিঠি দেয়। প্রতিনিধি দলটি মামলা, গ্রেফতারসহ ঢাকার গণসমাবেশের স্থান নিয়েও আইজিপির সঙ্গে কথা বলেছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, আইজিপি গায়েবি মামলা হলে তা খতিয়ে দেখবেন বলে বিএনপি নেতাদের জানিয়েছেন। এছাড়া আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ করার অনুমতি দিতে অনুরোধ জানালে এ নিয়ে তিনি কোনো ইতিবাচক আশ্বাস দেননি। বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তবে আইজিপি বিএনপি নেতাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই গণসমাবেশ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির প্রতিনিধি দলের এক নেতা বলেন, ‘৮ বিভাগীয় গণসমাবেশের উদাহরণ টেনে আমরা বলেছি, সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করেছি। বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়নি। উল্টো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে, ক্ষমতাসীন দল নানাভাবে বাধা দিয়ে গণসমাবেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা করেছে। কিন্ত আমরা সে পথে হাঁটিনি। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বহু সমাবেশ হয়েছে। সেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। পুলিশও তা বলতে পারবে না। তাহলে কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত নয়াপল্টনে গণসমাবেশ করার। আমরা কথা দিচ্ছি, নয়াপল্টনে কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না। সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশ করতে বিএনপির শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন। এজন্য বিএনপি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা চায়।’
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে বৈঠকের সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বরকত উল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে গায়েবি মামলা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের লোকজন বোমা ফাটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে, গ্রেফতার করছে। এর তথ্যসহ একটি চিঠি মহাসচিবের পক্ষ থেকে আমরা আইজিপিকে দিয়েছি। উনি (আইজিপি) আমাদের প্রতিনিধি দলের সবার বক্তব্য শুনেছেন। বিভিন্ন জায়গায় গায়েবি মামলা করা হচ্ছে, নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে, গ্রেফতার করছে, বাড়ি তল্লাশি করছে। আমরা এর প্রতিকার চেয়েছি। আইজিপি বলেছেন এগুলো খতিয়ে দেখবেন।
ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে স্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে বুলু বলেন, আমরা বলেছি নয়াপল্টনে করতে চাই। সমাবেশের স্থানের বিষয়ে আমরা দুইটা চিঠি দিয়েছি। দুইটা চিঠিতে আমরা নয়াপল্টনের স্থান চেয়েছি। আমরা কোনো দ্বিতীয় স্থান চাইনি। উনারা বলেছেন যে, আপনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করেন, আমরা সব সহযোগিতা করব। আমরা বলেছি এটা আমাদের আজকের বিষয় না। আমরা যে বিষয়টি নিয়ে এসেছি তার সঙ্গে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট না। এটা আমাদের স্থায়ী কমিটি, মহাসচিব আছেন তারা সিদ্ধান্ত দেবেন। এটা আমাদের এখতিয়ারে নেই।
বিএনপি মহাসচিব স্বাক্ষরিত আইজিপিকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়- ‘সম্প্রতি পুলিশ কর্তৃক রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মিথ্যা মামলা দায়ের এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন চরমতম পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ একটি পত্রিকার প্রতিবেদন তুলে ধরে বলা হয়, ‘ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিস্তারিত তথ্যসহ তালিকা প্রস্তুত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।’