রাজনীতিতে প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে জাতীয় পার্টি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বৈঠকের পর জাপার দ"/>
Home জাতীয় দেবর-ভাবি দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে ঐক্যের পথে জাপা

দেবর-ভাবি দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে ঐক্যের পথে জাপা

সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করার দিকে নজর

by Nahid Himel

রাজনীতিতে প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে জাতীয় পার্টি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বৈঠকের পর জাপার দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছে। দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব মিটিয়ে জাপাকে ঐক্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। উভয় গ্রুপই এখন জাপার ঐক্য চায়। পাশাপাশি বিএনপির ছেড়ে দেয়া ৭ আসন এবং আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করার দিকে নজর দিয়েছে জাপা। একই সঙ্গে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবে জাপা। জোটের সঙ্গে নির্বাচন করলেও কৌশলগত কারণে আসন ভাগাভাগি হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু  বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো সময় অনৈক্য ছিল না। আমরা একসঙ্গেই আছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। বিএনপির ছেড়ে দেয়া আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হোক Ñতার পর আমরা বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। আমরা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনশ’ আসনে প্রার্থী  দেব। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হবে কিনা সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কারো সঙ্গে নির্বাচন করছি না। সে কারণে ভাগাভাগির প্রশ্নই আসে না। জিএম কাদেরে বিষয়ে বলেন, বিষয়টি আদালতে রয়েছে। আদালতেই সেটি ফয়সালা হবে। আমরা আইনগতভাবেই তা মোকাবিলা করব।
বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্  বলেন, এখন আমরা একত্রিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছি। সব কিছুই আপাতত স্থগিত রয়েছে। বেগম রওশন এরশাদকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা স্থগিত করা হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  দলের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। যেহেতু জি এম কাদের দলীয় কার্যক্রম চালাতে পারছেন না, সে কারণে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার চিন্তাভাবনা ছিল। সে কারণেই বেগম রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। পরে উভয়পক্ষ থেকেই স্থগিত করা হয়েছে। বিএনপির ছেড়ে দেয়া আসনগুলোর সবগুলোতেই আমরা প্রার্থী দেব। এ বিষয়ে পার্টিই সিদ্ধান্ত  নেবে। বেগম রওশন এরশাদ চাচ্ছেন যাতে উভয় অংশই মিলেমিশে থাকে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যদি না আসে তা হলে সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। সে বিষয় মাথায় নিয়েই এগুচ্ছে জাপা। যাতে বিএনপির শূন্য জায়গায় জাপা স্থান করে নিতে পারে। ফলে পার্টির মধ্যে আর দ্বন্দ্ব নয়। ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। এসময় তাদের সঙ্গে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য রাহগির আল মাহি সাদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জাতীয় পার্টির মধ্যে চলমান জটিলতা নিরসন এবং সম্প্রতি যে ৭টি আসন শূন্য হয়েছে, সেসব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। এসময় জাতীয় পার্টির মধ্যে বিরাজমান সংকট নিরসনেও আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি আসন বাদে বাকি চারটি আসনই জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে সম্মত হন প্রধানমন্ত্রী। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিতে সম্মত হন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রস্তুতি নিতে বলেছেন নির্বাচনের জন্য।
জাপার দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) আপাতত দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তার দায়িত্ব পালন নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বাতিল করে বিচারিক আদালতের আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে জিএম কাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। একই সঙ্গে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বলেছেন আপিল বিভাগ। আগামী ৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, বিষয়টি আমরা আদালতেই মোকাবিলা করব।
সম্প্রতি জাপার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দেয়। চেয়ারম্যান বেশ কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। পাশাপাশি রওশন এরশাদ পার্টির কাউন্সিল করার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে ওঠে। তবে গত মঙ্গলবার গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাপার ওই শীর্ষ দুই নেতার  বৈঠকের পর সংকট অনেকাংশেই দূর হয়েছে।
বর্তমান সংসদে জাতীয় পার্টির ২৬ সংসদ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ২২ জন নির্বাচিত ও ৪ জন সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য। বিএনপির ছেড়ে দেয়া আসনগুলো হলো : চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, ঠাকুরগাঁও-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ এবং একটি সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থান করায় তিনি সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেননি। তাই তাঁর আসনটি শূন্য ঘোষণা হয়নি।
দেবর-ভাবির মধ্যে ঠান্ডা লড়াই অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই দূরত্ব বেড়ে যায়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরে রওশনপন্থিদের চাপের মুখে রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে যখন জিএম কাদেরকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তখন রওশনপন্থিদের চাপের মুখে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন এরশাদ। পরে রংপুরের নেতাদের আন্দোলনের মুখে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দ্বিতীয় দফায় ভারপ্রাপ্ত ও ভবিষ্যত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তিনি। জাতীয় পার্টি সৃষ্টির পর এ পর্যন্ত জাপা, জেপি, বিজেপি ও জাপা (জাফর) নামে ৪টি ধারা রয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment