নিউজ ডেস্ক ৷৷ সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির ২৭ দফা রূপরেখা অবাস্তব ও অসাংবিধানিক বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন দেশের রাজনীতিবিদ ও আইন বিশেষজ্ঞগণ। তাদের মতে, বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র। তারা বলেন, আমরা বিএনপির ২৭ দফা দাবি আমলেই নিচ্ছি না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কদের বলেছেন, বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা একটা স্টান্টবাজি। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি নেতাদের মুখে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা হাস্যকর।
বিএনপি ঘোষিত ২৭ রূপরেখা প্রসঙ্গে ১৪ দলীয় জোট নেতা ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি জনকন্ঠকে বলেন, এই রাষ্ট্র মেরামত মানে হচ্ছে বিএনপি যেমন সংবিধান চায় এবং যেভাবে দেশ পরিচালনা করতে চায়, সেই লক্ষ্যগুলো কার্যকর করা। অতীতে জিয়াউর রহমান একইভাবে রাষ্ট্র মেরামত করার নামে সংবিধান থেকে চার মুলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে উঠিয়ে দিয়েছিল। সংবিধানের ১২ বিধিকে বাদ দিয়ে দিয়েছিল। এবং ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
এটা হলো তাদের অতীতের ইতিহাস। সুতরাং সেই ইতিহাস থেকেই বোঝা যায়, এই ধরনের মেরামতের অর্থ কী তারা বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িকতা এবং মূলভিত্তি থেকে সরিয়ে নিতে চায়। এর বাইরে সংবিধান সম্পর্কিত যে কথাগুলো বলেছে বলে আমি শুনেছি, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্টপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্যের বিধান এটা তো তাদের মুখের কথা। কারণ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীতে আমরা যখন এ সম্পর্কিত প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সেটায় তারা রাজি হয়নি। তারা বরঞ্চ খালেদা জিয়ার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য আরো শক্ত অবস্থান নিয়েছিল। ৭০ বিধির ব্যাপারেও একই কথা।
আন্দোলনের পর ক্ষমতায় যেতে পারলে রাষ্ট্র কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন করতে এই ২৭ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে রূপরেখা ঘোষণাকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি ঘোষিত ২৭ দফা রূপরেখায় সংবিধান সংশোধন, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী না থাকা, ন্যায়পাল নিয়োগ ও নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করবে বিএনপি।
এর প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আকতার এমপি বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে। তার নানারকম অবস্থা আমরা দেখেছি। তারপরে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়েছি। এবং এটা সর্বোচ্চ আদালত থেকেও বলা হয়েছে। সুতরাং সে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা আবার তোলা মানে আরেকবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া।
তারপরে যে কর্মসূচি দিয়েছিল সেখানে দেখলাম, যুদ্ধাপরাধীদের সাজা মুওকুফ করে তাদের মুক্তি দাবি করেছে। মুক্তিযুদ্ধে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি তার প্রতি এটা একটা চপেটাঘাত। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা তাদের আগের অবস্থাতেই আছে। এই যে রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে তাদের যে রাজনীতি ছিল- তার কিছুই তারা ছাড়েনি। এ গুলো যতক্ষণ তারা না ছাড়ছে, যতই ভালো কথা বলুক সেসব ভালো বলে বিবেচিত হবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি জনকণ্ঠকে বলেন, ২৭ দফার প্রথমেই তারা বলছে, যে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানে অনির্বাচিত সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানার প্রশ্নই আসে না। এটা ডেড ইস্যু। প্রথম দফা তো আলোচনার অপেক্ষা রাখে না। তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর থাকল। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার যা যা করেছে, আমরা তা দেখেছি।
আমাদেরকে গ্যারান্টি দেবে যে অনির্বাচিত সরকার সংবিধান মতো তিন মাস থাকবে। বিলম্বিত হবে না দীর্ঘস্থায়ী হবে না। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ডেড ইস্যু। এটা মানার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর অন্যান্য যে দাবিগুলোর কথা বলেছে, রাষ্ট্র মেরামত এই শব্দ ঔদ্ধত্যপূর্ণ। তারা কিছু খুচরা পার্টি ভিড়িয়েছে। তাদের নাকে ডগায় মুলো ঝুলিয়ে দেওয়ার মতো এ ২৭ দফা। রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তন করবে যদি ক্ষমতায় আসে। প্রথম কথা, তাদের ক্ষমতায় আসতে হবে। তা হলেই তো পরিবর্তন করবে।
তাদের এ দফাগুলো আমলেই নিচ্ছি না। পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নষ্ট করার চক্রান্ত করছে। বিশ্বের বুকে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটা মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং ২০৪১ সালের উন্নত দেশে গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন, তখনি বিএনপি-জামায়াত আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করছে। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমরা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব, পরে প্রতিক্রিয়া জানাব।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল বলেন, বিএনপির জন্মই বন্দুকের নলের সাহায্যে, একটি অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। তারা কিভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।