বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা দুটি পৃথক ‘জোট’ গঠন করছে। বিশ দল কার্যত ভেঙে দেওয়ার পর ১২ শরিক দল মিলে ‘১২ দলীয় জোট’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও ৬ শরিক দলও ভিন্ন নামে একটি ‘ফ্রন্ট’ গঠন করতে যাচ্ছে। নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা।
আছে নানা গুঞ্জনও। তবে দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে পথ চলার ২০ দলীয় জোট হঠাৎ ভেঙে দেওয়া ও সমমনা দলগুলোর নতুন জোট গঠন বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন নেতারা।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, ৯ ডিসেম্বর অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে জোট ভাঙার আকস্মিক ঘোষণায় অনেক শরিক দল ক্ষুব্ধও হয়েছে। কেউ কেউ এও বলেছেন, হঠাৎ করে বিএনপির এ ধরনের ঘোষণায় তারা অবাক হন। এর পেছনে বিএনপি যে কৌশলগত কারণ বলছে সেটা জামায়াতে ইসলামীকেই বোঝানো হয়েছে বলেও মনে করছে শরিকরা।
এদিকে ১২ দল ও ৬ দলের পৃথক জোট গঠনের পেছনে সরকারের কোনো হাত রয়েছে কিনা তা নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। তবে নতুন জোট গঠনে যুক্ত দায়িত্বশীল নেতারা জানান, ২০ দলীয় জোট না থাকায় শরিকরা যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তারা যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। ছোট ছোট দল হিসাবে ততটা সাংগঠনিক শক্তি তাদের নেই। এজন্যই মূলত জোট গঠন করা। অতীতে তারা বিএনপির সঙ্গে ছিলেন। আগামীতে যুগপৎ আন্দোলনেও বিএনপির পাশে থাকবেন। এখানে তাদের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনে জন্য লিয়াজোঁ কমিটি গঠনে বিএনপির পক্ষ থেকে নামও চাওয়া হয়েছে। এনিয়ে তাদের সঙ্গে একটু মতবিরোধ থাকলেও আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে তা মিটে যাবে বলেও আশা করছেন শরিক দলের নেতারা। জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের পটভূমি যদি দেখি, আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক সময় জামায়াতে ইসলামী ছিল। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী একত্রে আন্দোলন করেছে। আবার পরে তাদের মধ্যে তিনটি ধারা সৃষ্টি হয়েছে। আবার খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ৫ দফা চুক্তিও করেছিল। তারপর আবার হেফাজতে ইসলামের সঙ্গেও বৈঠকে করছে। সুতরাং রাজনীতিতে এই বৈচিত্র্য তো থাকবেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কারা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে কি থাকবে না সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে’।
২০ দলীয় জোটের শরিকদের দুটি জোট গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০ দলের বিষয়ে আমরা ঘোষণা দেই বা না দেই শরিকরা তাদের নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করবে-এটাই স্বাভাবিক। তবে বিএনপি সবকিছুই অবহিত। যারা জোট করছেন তারা বিএনপির পরীক্ষিত বন্ধু। আশা করছি তারা যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথেই থাকবেন।’
জোটে থাকা ১২ দল হলো-মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল, ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বে জাগপা, এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এলডিপি, অ্যাডভোকেট জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট, কমরেড নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ও অ্যাডভোকেট আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।
জানতে চাইলে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আমরা সবাই এ সরকার পতন আন্দোলনে একমত। আমরা ১২টি দল একটি প্ল্যাটফরমে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেব। এখানে যে যেভাবেই হোক আন্দোলনে অংশ নেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।’
জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গেই আছি, ছিলাম, থাকব। কৌশলগত কারণে ২০ দলীয় জোট নেই। কিন্তু আমরা বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন নই। আমরা বিএনপির ২৭ দফাকে জাতির মুক্তির দফা হিসাবে আখ্যায়িত করেছি। এখানে কোনো ধরনের গুঞ্জন ছড়ানোর অবকাশ নেই। বিএনপির পাশেই আছি। যুগপৎ আন্দোলনে অন্যান্য যারা দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তি আছে তাদের সঙ্গেও আছি।’
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘বিএনপি একটি কৌশলগত কারণে ২০ দলীয় জোট নিয়ে এগোতে পারছে না বলে আমাদের জানিয়েছে। সে হিসাবে যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে তারা কাজ করতে চায়। বিএনপির আহ্বানে আমরা সাড়া দিয়েছি। বিএনপির নেতৃত্বে আরও যেসব দল এই যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে তাদের সঙ্গে আমরা ১২ দলও রাজপথে থাকব। এখন আমাদের নিয়ে নানা ধরনের কথা অনেকে বলতে পারেন, আরও বেশি বলবেন। কেননা এখন রাজপথে একটি স্পেস তৈরি করছি। নেতাকর্মীদের নিয়ে ভিন্ন পরিচয়ে রাজপথে নামছি। সরকার নানাভাবেই আমাদের দমাতে চাইবে।’
এদিকে ২০ দলীয় জোটে থাকা আরও ৬টি দলও একটি ‘ফ্রন্ট’ গঠনের চেষ্টা করছে। দলগুলো হলো-ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), খন্দকার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি, পিপলস লীগের অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন ও বাংলাদেশ ন্যাপের শাওন সাদেকী। ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে থাকব। যেহেতু ২০ দলীয় জোট নেই, সেজন্য একটা সমমনা জোট করব। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ঘোষণা করা হবে। সেখানে ৯ থেকে ১০টি দল থাকবে।’