করোনার কারণে টানা দুবছর বন্ধ থাকার পর আগামীকাল শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে । টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে এবার দুই পর্বের ইজতেমার প্রথম পর্ব চলবে ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি। চারদিন বিরতি দিয়ে আগামী ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলেম ওলামা গ্রুপের যোবায়েরপন্থি অনুসারীরা। দ্বিতীয় পর্বের নেতৃত্বে থাকছেন, আদি তবলিগ জামাতের নয়াদিল্লির মুরব্বি মাওলানা সাদপন্থি গ্রুপের অনুসারী মুসল্লিগণ।
রাজধানীর উপকন্ঠ ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে তুরাগ নদীর তীরে প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী এ বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন। বিশ্ব ইজতেমা শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুর হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার সকাল থেকে হাজার হাজার তবলিগ অনুসারী মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। বাস, ট্রাক, ট্রেন পায়ে হেঁটে মুসল্লিরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসছেন।
গত ১ মাস ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে তবলিগ অনুসারী মুসল্লিরা মাঠের প্রস্তুতি কাজে অংশ নেন। প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল মাঠটিকে বাঁশের খুঁটির ওপর চটের ছাওনির প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে ছাতা মাইক। বিদেশি তবলিগ অনুসারী মুসল্লিদের জন্য মাঠের উত্তর পশ্চিম কোণে আলাদ থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। থাকছে পুলিশ, র্যাবের কন্ট্রোল রুম। র্যাবের সিসি ক্যামেরায় পুরো মাঠটিকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট টিম অনিয়মের বিচারে থাকবে পুরো টঙ্গীজুড়ে।
বুধবার সকালে ইজতেমা ময়দানে দুটি গভীর নলকূপের উদ্বোধন করেন স্থানীয় এমপি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। বয়ান মঞ্চ করা হয়েছে মাঠের মাঝ বরাবর। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মিয়া জানান ৩১ টি টয়লেট বিল্ডিংয়ে একসঙ্গে ৯ হাজার মুসল্লি তাদের প্রকৃতির ডাক সম্পন্ন করতে পারবেন। এদিকে বিআরটিসি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ইজতেমার মুসল্লিদের আনা নেওয়ায় বিশেষ বাস ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা নিয়েছে।
ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর ওপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৫টি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে মুসল্লিদের পারাপারের জন্য। ৭ হাজারেরও বেশি পুলিশ আনসার, র্যাব সদস্য পোশাক এবং সাদা পোশাকে ইজতেমার ভেতর বাহিরসহ টঙ্গী-উত্তরার পুরো এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করবেন।
বুধবার ইজতেমা ময়দানে নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, আমরা সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা নির্ভয়ে ইজতেমায় অংশ নিতে পারেন। বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্র্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমা নির্বিঘœ করতে আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে বসেছি, কথা বলেছি। তাদের মধ্যে যে মতবিরোধ আছে সেটা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছি।
তারা আমাদের কথা দিয়েছেন, ইজতেমায় একপক্ষ অপরপক্ষকে সহযোগিতা করবেন। পাশাপাশি তাবলীগের মুরব্বিরা কথা দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে উভয়পক্ষ আমাদেরও সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের কথা দিয়েছেন, আমি তাদের ওপর আস্থা রাখতে চাই।
পকেটমারসহ নানা অপরাধ কার্যকলাপ রুখতে প্যাট্রাল টিম কাজ করবে। থাকবে ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ। সাদা পোশাক ও পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুুলিশ বিভাগ ১৪টি কন্ট্রোলরুম তৈরি করেছে। র্যাবের কন্ট্রোল রুম থাকবে, ডিএমপি তার এলাকায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে, এসবি, এটিও, সিআইডি, নৌপুলিশ, অবজারভারভেশন টিম থাকবে, র্যাবের হেলিকপ্টার টহল থাকবে। ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল প্যাট্রোল টিম, বোম্ব ডিস্পোজাল টিমও থাকছে পুরো ইজতেমাজুড়ে।
ভারতের ৭ রাজ্য থেকে মুসল্লি আসছেন ॥ স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭টি রাজ্যে থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি আসছেন আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে। গতবছরের নভেম্বরের ২৬ তারিখ থেকে বুধবার ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২২০ জন ভারতীয় মেহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। ভারতীয় মুসল্লিরা আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে বাস কিংবা আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে যাচ্ছেন।