গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের প্রতিনিধি দল তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সব বাধা অতিক্রম করে সরকার দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিকল্পিতভাবে এগোতে পারলে যে কোনো দেশ উন্নতি করবে। আমাদের বাধা তো আছে, বাধা তো থাকবে। আমাদের তো একে হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তারপর হচ্ছে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, আন্তর্জাতিকভাবে বারবার কিছু বাধা আসে। সৌজন্য সাক্ষাতে এসে ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৬টি ব্যাংক থেকে অনুদান হিসেবে ১১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা আর্থিক অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন।
সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, বিভিন্ন সময় অনুদান দেওয়ার জন্য ব্যাংকারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ জানাই। যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আমার বলতেও হয় না, আপনারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবাই চলে আসেন এবং সহযোগিতা করেন।
তিনি বলেন, আপনাদের প্রদত্ত অনুদান যথাযথভাবে মানুষের কাজে লাগে। অনেক মানুষের কাজে লাগে, আপনারা হয়তো চিন্তাও করতে পারবেন না, কত মানুষকে আমরা কতভাবে সাহায্য করি চিকিৎসা, ঘর-বাড়ি সব বিষয়ে।
আশ্রয়ণের ঘর পাওয়া মানুষের জীবন বদলে যাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণের ঘর পাওয়া মানুষের হাসি, তাদের তৃপ্তি, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, ঘরের সঙ্গে তাদের কিছু জমিও দেওয়া হচ্ছে। জীবন-জীবিকার জন্য আমরা নগদ টাকা দিচ্ছি। পাশাপাশি ট্রেনিং করিয়ে দিচ্ছি। ফলে আশ্রয়ণ প্রকল্পে তারা শুধু একটি ঘরই পাচ্ছে না, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়ে যাচ্ছে। প্রায় সাড়ে সাত লাখ পরিবার, আমরা যদি ৫ জন করেও ধরি। তাতেও দেখা যাচ্ছে প্রায় ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে।
সরকারপ্রধান বলেন, খুবই দুস্থ, যাদের কোনো ঠিকানা ছিল না, থাকার জায়গা ছিল না। কারো বারান্দায়, গোয়ালঘরে, ফুটপাতে বা রাস্তাঘাটে পড়ে থাকত, একটি ঘর পাওয়ার পর আসলে তাদের জীবনটাই পাল্টে গেছে। অনেকে সেখানে শাক-সবজি চাষ করছে, হাঁস-মুরগি পালন করছে। কুটির শিল্প করছে অনেকে। অনেকে সেখানে দোকানও দিয়েছে। তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে বিনিময় করছে, কেনাবেচা করছে। তারা জীবন-জীবিকার একটা পথ খুঁজে পাচ্ছে। মানুষের জীবনটা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
দেশের অধিকাংশ গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে ইতোমধ্যে ঘর দেওয়া হয়ে গেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অল্প কিছু বাকি আছে। সেগুলোও তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আশ্রয়ণের প্রথম পর্বে ব্যারাক হাউজগুলোকেও আরও উন্নত করে দেওয়া কিংবা তাদের নতুন ডিজাইনের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, শুধু সরকার না, সবাই মিলে দেশকে উন্নয়নের পথে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করে আশ্রয়ণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর পর জাতির পিতা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এদেশে যারা ভূমিহীন আছে, তাদের তিনি ঘর দেবেন, জমি দেবেন এবং পুনর্বাসন করবেন। এ কাজটা শুরু করেছিলেন নোয়াখালীর চরে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করে প্রথমে আমরা ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করে দিয়েছি। পরে আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্প বলে একটা প্রকল্প নিলাম। সেনাবাহিনীর হাতে দায়িত্ব দিলাম। তারা এই ঘরগুলো করে দেবে, ব্যারাক হাউজ। এভাবে আমরা প্রায় দেড় লাখ পরিবারকে পুনর্বাসন করে দিলাম। পরে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমরা সরকারে ছিলাম না। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ শুরু করলাম।
আমরা দুই কাঠা জমি এবং একটি ঘর তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট যারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর নির্মাণে কাজ করছেন, তারা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। তাদের অনুভূতি, তারা একটা মহৎ কাজ করছেন। তিনি বলেন, করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সবকিছু মিলিয়ে অর্থনীতির ওপর একটু প্রভাব পড়েছে। অন্য দেশের মতো আমরা বিপর্যস্ত না। আমরা কাটিয়ে উঠছি, কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।
দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বেসরকারি খাতে ব্যাংক দেওয়ার সুফলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রাইভেট ব্যাংকগুলো হওয়ায় তিন লাখ গ্র্যাজুয়েটের চাকরি হয়েছে। এটি একটি বড় বিষয়।