মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উচ্চ পর্যায়ের সফরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় নেয়ার বার্তা দেয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে চলমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আগামী ৫০ বছরে আরও এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে উভয় পক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর দুই দিনের সফরটি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের কাছে ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাকর্মীরা আশা করেছিল গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে কড়া বার্তা দেবেন। মার্কিন প্রতিনিধি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এবং সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচনের আহ্বান জানালেও সরকার পাল্টা যুক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিগত নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা ও আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে।
এ ছাড়া গত দুই মাস ধরে কূটনীতিক অঙ্গন ও জনগণের মধ্যে গুজব ছিল বাংলাদেশের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু মার্কিন প্রতিনিধির দুই দিনের সফরের দফায় দফায় বৈঠকে সেটির কোন আভাস পাওয়া যায়নি। উল্টো র্যাবের কর্মকা-ে সন্তোষ প্রকাশ এবং ১০ ডিসেম্বরে বিএনপিকে সমাবেশের আয়োজন করতে দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছেন ডোনাল্ড লু।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি, র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর দেশটির নিষেধাজ্ঞা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এবং জিএসপি পুনরুদ্ধারসহ সমসাময়িক বেশ কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রও সফরটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। উচ্চ পর্যায়ের সফরে বাংলাদেশকে অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র ঘোষণার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেট সেক্রেটারি মানবাধিকার, গণতন্ত্র, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ও শ্রম অধিকারসহ সমসাময়িক ইস্যুতে পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা সেটি তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানতে চেয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে আশ্বস্ত করেছে সংবিধানের আলোকে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেনও বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। তাদের যে কোনো গঠনমূলক পরামর্শ আমরা ইতিবাচক হলে গ্রহণ করব। আগামীতে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। এ ছাড়া জনগণের সঙ্গে ভালো হবে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে যোগ দেবে বাংলাদেশ।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে জানান, শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশে সব দলের রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। তারা জনগণের সম্পদ বিনষ্ট করলে অথবা রাস্তা অবরোধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। বিরোধী দল শান্তিপূর্ণভাবে আগামীতেও কর্মসূচি পালন করতে পারবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের তিন মাস আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করে। আগামীতেও তার ব্যত্যয় ঘটবে না।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, করোনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ নানা দেশে মূল্যস্ফীতির কারণে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এমন পরিস্থিতিতে ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাম্প্রতিককালে এশিয়ার এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি নজর রয়েছে। এ ছাড়া ভারত, চীন, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের মতো দেশও এই বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জিএসপি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সালমান এফ রহমানের বৈঠক
রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকালে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ এবং আগামী সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে তার এই সফরে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দু’দিনের সফরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বৈঠকের পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তার। এছাড়াও, শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি শোনার জন্য মানবাধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করবেন ডোনাল্ড লু।