আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণে তাদের সহায়তা অব্যহত রাখবে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ "/>
Home Lead 2 আইএমএফ ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে উত্তরণে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ৷৷ আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিবে 

আইএমএফ ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে উত্তরণে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ৷৷ আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিবে 

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

 আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণে তাদের সহায়তা অব্যহত রাখবে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাতকালে আইএমএফ-এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর অন্তোনিয়েতে মোনসিও সাইয়েহ এ আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, ‘২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণের আকাক্সক্ষা রয়েছে এবং এটা বাস্তবায়নে আইএমএফ বাংলাদেশকে তার সহায়তা অব্যহত রাখবে।’
মোনসিও আরো বলেন, আইএমএফ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং তিনি এই সম্পর্ককে আরো জোরদার করতে এসেছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বেল-আউটের জন্য কোন ধরনের সহযোগিতা চায় না, বরং পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশ সহযোগিতা চেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা কোন ধরনের বেল-আউট চাই না। আমাদের এই কর্মসূচিটি বেইল-আউট নয়।’
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

আইএমএফ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ এর অভিঘাতের কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছে। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশগুলো মুদ্রাস্ফীতিসংক্রান্ত চাপ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য-বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় আইএমএফ পাশে থাকবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার  কারণে বাংলাদেশের উন্নয়নে গতি মন্থর হয়েছে। বাংলাদেশও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য-বৃদ্ধির কারণে কঠিন পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নি¤œ আয়ের মানুষকে সহায়তা করতে সরকার সামাজিক সুরক্ষা জাল ও খাদ্য কর্মসূচি বর্ধিত করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দারিদ্র দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়ার পাশাপাশি হতদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সামাজিক সুরক্ষা জালের আওতা বর্ধিতকরণ এবং টিসিবি ও ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে তাদের মাঝে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরনের মতো নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পতিত জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে এসেছে। এ সময় তিনি বিগত এক দশকে নারী ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, কৃষি ও ৬ শতাংশ ডিজিপি প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অনেক উন্নত দেশের নি¤œ আয়ের মানুষও কঠিন সময় পার করছে।
আইএমএফ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ সময় তিনি বিগত এক দশকে নারী ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, কৃষি ও ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির উল্লেখ করে বলেন, এ ধরনের কর্মসূচির  লক্ষ্য হচ্ছে- দারিদ্র দূরীকরণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠরি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ইয়োং বাংলা মুভমেন্টের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হতে উচ্ছুক তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা নারী ক্ষমতায়ন ও নারী শিক্ষার জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত নানাবিধ পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬০ শতাংশ শিক্ষক নারী। এছাড়াও মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়ে ও ছেলেদের লিঙ্গভিত্তিক অনুপাত যথাক্রমে ৫৩ শতাংশ ও ৪৭ শতাংশ। সরকার আইসিটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে, তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পদক্ষেপ নেয়ায় আমাদের দেশে একটি শক্তিশালী তরুণ ফ্রিল্যান্সার শ্রেণী গড়ে উঠেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা প্রদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামে বসবাসকারী নারীরা এর প্রকৃত সুফলভোগী।
বৈঠকে, আইএমএফ প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটি ফটোগ্রাফ হস্তান্তর করে। ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট আইএমএফ এর আর্টিকেল অব এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরকালে ছবি দুটি তোলা হয়েছিল।
বৈঠককালে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জ্যেষ্ঠ অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও ঢাকায় নিযুক্ত আইএমএফ এর স্থায়ী প্রতিনিধি জয়েন্দু দে উপস্থিত ছিলেন।

আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিবে

সফররত আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্তোয়েনেট মনসিও সায়েহ বলেছেন, আইএমএফ বোর্ড আগামী ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশকে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের বিষয়টি বিবেচনা করবে।
তিনি গতকাল এক সংবাদ বিবৃতিতে জানান, আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের সঙ্গে এই কর্মসূচি অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সায়েহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়ে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত।
তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের চমৎকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই যা দারিদ্র্য বিমোচনে ধারাবাহিক অগ্রগতি এবং জীবনযাত্রার মানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল রাখতে, ঋণ-জিডিপি অনুপাত কম রাখতে এবং বাহ্যিক সুরক্ষাগুলো পর্যাপ্ত রাখতে সহায়তা করেছে।
আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মতোই বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক ধাক্কার প্রভাব মোকাবেলা করছে। প্রথমে করোনা মহামারি থেকে এবং তারপর ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ থেকে।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই ধাক্কার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি এবং আমি এই কঠিন সময়ে অরক্ষিতদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশসহ এগুলো মোকাবেলায় বাংলাদেশের বিস্তৃত পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।
সায়েহ বলেন, কর্তৃপক্ষের স্বদেশী সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশ এবং আইএমএফ সম্প্রতি বর্ধিত ক্রেডিট সুবিধা, বর্ধিত তহবিল সুবিধা এবং আইএমএফের নতুন স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই সুবিধা (আরএসএফ) এর অধীনে একটি প্রাথমিক পর্যায়ে চুক্তিতে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, আমাদের আলোচনায় আমরা এই প্রোগ্রামের মূল উপাদানগুলোর উপর দৃষ্টি দিয়েছি, যার মধ্যে কর রাজস্ব বাড়ানো এবং আরও দক্ষ আর্থিক খাত গড়ে তোলার দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে।
আইএমএফের এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ ও রফতানি বহুমুখীকরণের পদক্ষেপের পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে সংস্কার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীল করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করতে সহায়তা করবে।
সায়েহ বলেন, তারা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করেছেন যা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে।
তিনি বলেন, আইএমএফের আরএসএফ বাংলাদেশের জলবায়ু বিনিয়োগের চাহিদা মেটাতে সাশ্রয়ী মূল্যের, দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন প্রদান, জলবায়ু অর্থায়নকে উদ্বুদ্ধ করা এবং আমদানি-সমন্বিত জলবায়ু বিনিয়োগ থেকে অর্থ প্রদানের ভারসাম্যের চাপ হ্রাস করার উদ্যোগ নিয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment