শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা ষড়যন্ত্রের অন্য উপায় না পেয়ে এখন পাঠ্যক্রমের ওপর চড়াও হয়েছে। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে পাঠ্যবই নিয়ে মিথ্যাচার করছে এই অপশক্তি। অথচ পাঠ্যবইয়ে ধর্মবিরোধী কোনো কিছুই নেই।’
গতকাল শনিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এর ১০ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ আরেফিন নগরে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের স্থায়ী ক্যাম্পাসে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য রুবানা হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ ফার্স্ট লেডি চেরি ব্লেয়ার, সমাবর্তন বক্তা ছিলেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস জন সেক্সটন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নতুন পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম বিরোধী বিষয় আছে বলে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচার চালাচ্ছে। আরও বলা হচ্ছে- ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত সব বিষয় সরিয়ে দিয়ে ভিন্নধর্মী জিনিসপত্র আনা হয়েছে, এটি একেবারেই অসত্য। মূলত তিন বছর আগের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি বইয়ের ছবি দিয়ে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যে বইটি এখন সেখানেও চলে না। আমার ছবি লাগিয়েও নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে অপশক্তি। তাদের আপনারা সবাই চেনেন। তারা শুধু মিথ্যাচার করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় না, দেশের স্থিতিশীল পরিবেশটাকেও নষ্ট করতে চায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে কিছু ভুল শনাক্ত হয়েছে। সেই ভুলের মধ্যে একটি খুব বড় তথ্যগত ভুল হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর শপথ গ্রহণ বিষয়ে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ২০১৩ সাল থেকে প্রত্যেক বছরের বইয়ে এই ভুল ছিল। কিন্তু কখনও কারও চোখে পড়েনি সেটি। এ বছর শিক্ষার্থীরা বইগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছে বলেই ভুলটি ধরা পড়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই যে পাঠ্যবইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, এটি পাঠ্যবইগুলোর মান উন্নত করতে এবং আরও নির্ভুল করতে আমাদের সহযোগিতা ও অনুপ্রাণিত করবে।’
কাগজ সংকটের কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গত বছর কাগজ শিল্প বিরাট একটা সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। ডলার পরিস্থিতির কারণে আমরা আমদানির দিকেও যেতে পারিনি। এরপরেও সকল শিল্পের সহযোগিতায় ১ জানুয়ারি দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে দিতে পেরেছি। বাকি বইগুলোও চলতি মাসের মধ্যেই আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেব।’
অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেন বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নারীশিক্ষা দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান, ইরাক, মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে নারীশিক্ষা বেশ কঠিন। তাদের জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে। নান্দনিক ও মনোরম পরিবেশে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস পড়ালেখায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য রুবানা হক বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনও চলমান। এখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নানান দেশে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। যেসব দেশ নারীশিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে এবং নারীদের শিক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে তাদেরকে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাগত জানাচ্ছি।’