স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জগন্নাথ কলেজ বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দেয়ালে দেয়ালে আমার স্মৃতি মন্থন করি। রাজনৈতিক জীবনের গতিকে আরও বেগবান করেছিল আমার এই কলেজটি।
গতকাল শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং আল্যামনাইয়ের পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্য এ কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নাম শুনলে আমার দুর্বলতা লাগে। জগন্নাথ থেকে আমার রাজনীতি জীবনের হাতে খড়ি এবং পরবর্তীকালে আমার সফলতা অর্জিত হয় রাজনীতি জীবনে। যখনই শুনি জগন্নাথ কলেজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মর্যাদা পায় আমি আনন্দে আপ্লুত হই।
আমি জগন্নাথ কলেজের ছাত্র যখন সেই সময় ১৯৬৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা ঘোষণা করলেন। তখন আমাদের এই জগন্নাথ কলেজের নেতারা আমাদের বোঝাতেন ৬ দফার পটভূমি কি? তখন আমরা গ্রাম থেকে গ্রামন্তর চলে গেলাম এবং ৬ দফা দাবির গুরুত্ব মানুষকে বোঝাতে শুরু করলাম। সেই সময় জগন্নাথে আমি যদি ভর্তি না হতাম তাহলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে করতে পারতাম না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন বিল্ডিংগুলোর স্মৃতির কথা স্মরণ করতে আমি বারবার এখানে আসি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তৈরির জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের পরে আমরা মনে করতাম, আমরা বেঁচে আছি না মরে গেছি। যখন রাজাকারদের গাড়িতে দেশের পতাকা লাগানো দেখি। আমি যখন সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলাম তখন সেই দেশের গাড়ির চালক আমার কথা শুনে বুঝতে পারেন আমি বাংলাদেশি তখন তিনি একটা পার্কিংয়ে গাড়ি থামিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কিভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেন? আমি লজ্জায় মাথানত হলাম।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধের বিপক্ষ শক্তি আলবদর, রাজাকার ও ১৫ই আগস্টের জাতির পিতার পরিবারকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার করায় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। এছাড়াও জয় বাংলা স্লোগানকে জাতীয় স্লোগানে রুপান্তরিত করায় আমি আবারও ধন্যবাদ জ্ঞাপক করছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী বছর ১লা ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের নির্বাচন নির্বাচনে যারাই ভোটে জয়ী হবে তারাই সরকার গঠন করবে এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ যে আলোকিত পথ ধরে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত করছে। সেই উন্নয়নে অবদান রাখবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল্যামনাইয়ের শিক্ষার্থীরা।
আল্যামনাইয়ের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জবি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তরুণরা যখন কোন কাজ করার জন্য এক সঙ্গে হয় আমি বিশ্বাস করি সেই কাজ অবশ্যই সম্পূর্ণ হয়। আমরা তরুণদের কাছে আশা করি নেতৃত্ব। তরুণরা ভলো কাজে নেতৃত্ব দিবে।
বাসের উদাহরণ দিয়ে বলেন, একটি বাসে দেখা গেল কিছু নারী সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে সিটে বসা তরুণরা নিজেদের আসন ছেড়ে দিয়ে নারীদের বসার সুযোগ করে দিল। এতে দাঁড়িয়ে থাকা নারীরা সিটে বসল এবং তরুণদের প্রতি পজিটিভ চিন্তা ধারণ করল। এভাবে তরুণ সমাজ ভালো কাজ করে সমাজ পরিবর্তন করে দিতে পারে।
এ সময় তিনি বলেন, গরু দুধ দেয় এ কথা মিথ্যা। আমরা গরু থেকে দুধ আদায়করী। ঠিক তেমনি তরুণদের কোন কিছু আদায় করতে হলে তাদের সেই লক্ষ্য অর্জন করে নিতে হবে। আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কাজ করতে হবে।
এ সময় তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, অন্যরা যদি পারে আমি কেন পারবো না। নিজেদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে হবে। আমরা সামনের দিনগুলোতে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হচ্ছি এখানে তরুণ দের কাজ করতে হবে।
জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, আল্যামনাই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। আল্যামনাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সহযোগিতা করে থাকে। একটি উৎসবমুখর পরিবেশের মাধ্যমে এই পূর্ণমিলনী জীবনের অতিত স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য আল্যামনাইয়ের পরামর্শ ও সহযোগিতায় আমরা সর্বাত্মক কামনা করি।
আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা বিশ্ব মানের বিশ্ববিদ্যালয় যাতে হয় সে জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এলামনাই যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠনে কর্মরত রয়েছেন তারা আমাদের ছেলে মেয়েদের গাইড করবেন। যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো করে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ, অনুষদের ডীন, বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রাজনীতিবিদ ও আল্যামনাইয়ের শিক্ষার্থীরা।