শবে বরাতের আগে আরেক দফা বাড়ল সব ধরনের নিত্য"/>
Home জাতীয় শবে বরাতের আগে ফের বেড়েছে পণ্যমূল্য

শবে বরাতের আগে ফের বেড়েছে পণ্যমূল্য

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

শবে বরাতের আগে আরেক দফা বাড়ল সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। ভরা মৌসুমে দাম বেড়ে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দামে যেন ডাবল সেঞ্চুরি! দাম আরও বাড়ার আভাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডিমের দাম সামান্য কমলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি ও গরু-খাসির মাংস। চাল, আটা, ডাল, ভোজ্যতেল ও চিনি উচ্চ দামে স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে আমদানিকৃত ছোলা, রসুন ও আদার দাম।

বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি আসা শুরু হয়েছে তবে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফার্মগেট কাঁচা বাজার, খিলগাঁও সিটি করপোরেশন কাঁচা বাজার, গোড়ান কাঁচা বাজার ও মালিবাগ রেলগেট কাঁচা বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি বেশিরভাগ পণ্যের দাম বাড়ার খবর জানিয়েছে। এদিকে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অস্থির নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের বাজার। রোজা সামনে রেখে ইতোমধ্যে বেশির ভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। আগামী ৭ মার্চ পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে।

শবে বরাত সামনে রেখে আরেক দফা দাম বাড়ানোর কারসাজি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি নেই। আমদানিকৃত প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্বের অনেক দেশে ডলারের দাম বেড়ে যায়। এর সঙ্গে বাড়ে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও  নিত্যপণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি। অসাধু ব্যবসায়ীরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে পুঁজি করে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

 

 

বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকায়, যা সপ্তাহ দুয়েক আগেও ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইভাবে ৬৫০-৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হলেও সেই মাংস কিনতে এখন ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা। দেশি মুরগি ও খাসির মাংস এখন উচ্চবিত্তের খাবার। প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১২০০ টাকায়। মাছের দামও বেশি। যে কোনো আইটেমের মাছে প্রতিকেজিতে দাম বেড়েছে ৫০-১৫০ টাকা পর্যন্ত। শবে বরাতের আগে আরেক দফা মাংসের দাম বাড়ানোর আভাস দিয়েছেন মাংস ব্যবসায়ীরা।

 

 

কারণ ওই সময় মাংসের বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে। বিশেষ করে গরু ও খাসির মাংসের চাহিদা তৈরি হয় শবে বরাতে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা শাজাহানপুরের  খলিল মাংস বিতানের কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন জানান, মাংসের দাম আরও বাড়বে।
পাইকারি বাজারে গরু ও খাসির দাম অনেক বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, দেশে গরু ও খাসির খামারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পশু উৎপাদন হলেও খাবারের দাম বাড়ায় মাংসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তাদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৭৫০ টাকায় প্রতিকেজি গরু এবং  খাসির মাংস ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও শবে বরাতের সময় দাম আরও বাড়তে পারে। প্রতি সপ্তায় গরুর দাম বাড়ছে। অন্যদিকে ভোক্তাদের অভিযোগÑ ব্রয়লার মুরগি থেকে শুরু করে গরু-খাসির মাংস ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। তাদের প্রশ্নÑ আগে সরকার নির্ধারিত মূল্যে গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হলেও এখন কেন হয় না?  অসৎ উদ্দেশ্য থেকে এটা করা হয়েছে।

আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের। গোড়ান কাঁচা বাজার থেকে ব্রয়লার মুরগি কিনছিলেন তিলপা পাড়ার বাসিন্দা অটোরিকশা চালক হাফিজ উদ্দিন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ‘আমাদের মতো গরিবের এখন আর খাওন নাই। গরিবের পাত থেইক্যা গোস্ত উঠে যাবি।’ মাছ-মাংসের দাম বাড়ায় শুধু যে, স্বল্প আয়ের মানুষ কষ্টে আছেন তা নয়। মধ্য আয়ের চাকরিজীবী এমনকি ছোট ব্যবসায়ীরাও কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। অনেক পরিবার ব্যয় সঙ্কুলান করতে না  পেরে খাবারের মেন্যু কমিয়ে দিচ্ছেন। যারা আগে প্রতিদিন দুধ কিংবা ডিম খেতেন তাদের অনেকেই একটি আইটেম রেখে আরেকটি বাদ দিয়ে দিচ্ছেন।

যারা কখনো বাসায় ব্রয়লার মাংস হিসেবে গ্রহণ করতেন না, তারাই এখন এটিকে মাংস হিসেবে খাচ্ছেন। খরচ কমাতে বাজারের তালিকা থেকে দেশি মুরগি ও অন্যান্য মাংস বাদ দিচ্ছেন। আর যারা ব্রয়লার নিয়মিত খেতেন তারা এখন খরচ কমাতে এই মাংস বাদ দিয়ে ডাল কিংবা কমদামি মাছ ও সবজি খাচ্ছেন। এরপরও ব্যয় সঙ্কুলান হচ্ছে না। মাছ-মাংসের পাশাপাশি সবজির দামও বাড়ছে। সরবরাহ কমে যাচ্ছে শীতের সবজির। গ্রীষ্মকালীন কিছু সবজি বাজারে দেখা গেলেও তা ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। প্রতিকেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকায়।

ভরা মৌসুমে চড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। প্রতিকেজি মরিচ পেতে ভোক্তাকে ১৮০-২০০ টাকা দিতে হচ্ছে। কাঁচা মরিচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেবুর দাম। প্রতিহালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এদিকে বাজারে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বেশি। চাল, ডাল, আটা ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপণ্য উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল। খুচরায় মোটা চালের দাম ৫২-৫৫ টাকা কেজি। বিআর ২৮ চালের দাম ৫৮-৬২ টাকা। আর মিনিকেট ৭০ টাকার আশপাশে। নাজিরশাইলের মতো উচ্চ মূল্যের চালের দাম পড়ছে ৭৫-৮৫ টাকা। এসব চালের দাম বাড়ার পর আর কমছে না।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment