প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্য ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়নশীল  দেশ হিসেবে উত্তরণের ধারা বজায় রাখতে অর্থনৈতিক কূট"/>
Home Lead 2 অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদারে আরও সক্রিয় হোন : কূটনীতিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী 

অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদারে আরও সক্রিয় হোন : কূটনীতিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী 

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্য ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়নশীল  দেশ হিসেবে উত্তরণের ধারা বজায় রাখতে অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদারে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত সোমবার সন্ধ্যায় কাতারে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানস্থলে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক দূত সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি আপনাদেরকে (কূটনীতিকদের) অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদার করতে সক্রিয় হতে হবে।’ সম্মেলনে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে অবস্থানরত বাংলাদেশি কূটনীতিগণ যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাওয়ায় সেই সব দেশের প্রতি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন, যেখান থেকে বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে লাভবান হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের চোখ কান খোলা রেখে সব দেশের সঙ্গেই আলোচনা এবং মধ্যস্থতা করতে হবে। যাতে  উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা টিকে থাকতে, আরও এগিয়ে যেতে এবং সবশেষে একটি উন্নত দেশে উন্নীত হতে পারি।’ পারি
শেখ হাসিনা বলেন, একসময় কূটনীতি একটি পররাষ্ট্রনীতির বিষয় ছিল। কিন্তু এখন এটি অর্থনৈতিক বিষয়, মানে অর্থনৈতিক কূটনীতি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘কাজেই, আপনারা যারা বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন তাদেরকে সেই দেশগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে, যেদেশে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারি। একই সঙ্গে যেসব দেশে আমাদের পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে এবং যে দেশগুলো থেকে আমরা কম এবং ন্যায্য দামে পণ্য আমদানি করতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ব্যবসা ও বাণিজ্য আরও বাড়াতে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
‘যেসব দেশে আমাদের পণ্যের চাহিদা আছে এবং যেখানে বিপণনের সুযোগ আছে সেই সমস্ত দেশকে চিহ্নিত করুন,’ বলেন তিনি।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের পররাষ্ট্র নীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি অন্তত দাবি করতে পারি যে, বাংলাদেশ সঠিকভাবে এই নীতি অনুসরণ করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে, তবে, যখন কোনো অন্যায় দেখা যাবে, তখন বাংলাদেশ অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে, যা মিয়ানমারের ক্ষেত্রে করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘যখন মিয়ানমারে ঘটনাটি ঘটেছিল, তখন আমরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সংঘাতে জড়াইনি। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি উপস্থিত ছিলেন।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী এখন কাতার সফরে রয়েছেন।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানি এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে তিনি গত শনিবার কাতারে পৌঁছেন।
বুধবার ঢাকার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।

 

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বাণিজ্য অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে তাদের বাণিজ্য-সম্পর্কিত অবকাঠামো সম্প্রসারণ, উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকারকে কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক হওয়ার ওপর অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, “এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কানেকটিভিটি, মানব মূলধন, বাণিজ্য অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরে সহায়তা এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন।”
গতকাল  কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ৫ম জাতিসংঘ সম্মেলনে “আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক একীভূতকরণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি” শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের বিষয়ভিত্তিক গোল টেবিলের প্রধানমন্ত্রী সহ-সভাপতিত্ব করছিলেনকালে এ কথা বলেন।
ডব্লিউটিওতে এলডিসি গ্রুপ ইতিমধ্যেই এই বিষয়গুলোর ওপর তাদের প্রস্তাব দিয়েছে উল্লেখ করে, তিনি বলেন, “বিশেষত কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের কারণে এই প্রস্তাবগুলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা স্পষ্ট যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা এবং দোহা কর্মসূচিতে নিজেদের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জনে নিজেদের প্রচেষ্টাকে পুনরায়-দ্বিগুণ করতে হবে। এজন্য জাতীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিশ্রুতিগুলো প্রাজ্ঞ, বাস্তবসম্মত এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উৎপাদনশীল ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভালভাবে পরিকল্পিত হওয়া উচিত। আমি আশা করি, দোহা কর্মসূচিতে আমরা নিজেদের জন্য যে লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করেছি, তা অর্জনে আমাদের আলোচনা ইতিবাচকভাবে অবদান রাখবে ৷’
বাংলাদেশের ওপর আলোকপাত করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার একটি বহুমুখী (মাল্টিমোডাল) পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তঃসীমান্ত সংযোগ উন্নত করার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছে। ‘এটি খরচ কমাবে, দক্ষতা বাড়াবে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উন্নয়ন ঘটাবে।’
তিনি বলেন, তাঁরা দক্ষতা উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মেধা সম্পদের উন্নয়ন এবং এর প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের নীতি হচ্ছে জাতীয় উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা। “হাতে হাত রেখে কাজ করে, আমরা এখন আমাদের দেশকে এলডিসি উত্তরণের বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছি এবং আমাদের স্বল্প মেয়াদী অগ্রাধিকার হচ্ছে মসৃণ এবং টেকসই উত্তরণ নিশ্চিত করা।”
উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকের আরেকজন সহ-সভাপতি ছিলেন বুরুন্ডি প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট এভারিস্ট এনদাইশিমিয়ে।
অন্যান্যদের মধ্যে এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ এবং বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীগণ এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং অন্যান্য স্বীকৃত আন্তঃসরকারি সংস্থার পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment