খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবেদন করা ১২ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কয়েকটির নিজস্ব জায়গা নেই। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা থাকলেও ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেনি। এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরে তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময়ের আবেদন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, স্থায়ী ক্যাম্পাস ঢাকার বাইরে নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেকাংশে কমে যাবে। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
এ বিষয়ে ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ কালের কণ্ঠকে বলেন, পাঠদানব্যবস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক গুণগত মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। ঢাকার বাইরে এমন অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো শিক্ষার্থীদের চাহিদার শীর্ষে। উন্নত পড়াশোনার জন্য প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী দেশের বাইরে যাচ্ছে। ফলে গুণগত মানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে পারলে ঢাকার বাইরে ক্যাম্পাস থাকলেও শিক্ষার্থী ভর্তিতে প্রভাব ফেলবে না।
আবেদনকৃত ১৫ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির আবেদনে জানানো হয়, নিজস্ব ক্যাম্পাসে ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে তারা। অনুমোদন পেলেই নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ করে সব কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের আশ্বাস দিয়েছে তারা। মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে ফাউন্ডেশনের নামে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সময় চেয়েছে তিন থেকে পাঁচ বছর। তিন বছর করে সময় চেয়েছে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। দুই বছরের সময় চেয়ে আবেদন করেছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ ও স্টেট ইউনিভার্সিটি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ছয় মাস এবং ল্যাব স্থানান্তরে ছয় মাসের আবেদন করেছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। রয়াল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা চেয়েছে তিন মাস। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চেয়েছে দু-তিন মাস।
ইউজিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ভবনে যেতে নারাজ। তারা বিভিন্ন অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সম্প্রতি একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আবেদনের সময়সীমার যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নমনীয়তা থাকলেও নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যেতে চাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউজিসি সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাদের জন্য এক ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আবার যারা এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তাদের জন্য নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিলের সেই নির্দেশনাই বহাল থাকবে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য তিন থেকে ছয় মাস সময় চেয়েছে। তাদের ক্যাম্পাস অনেকটাই প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের জন্য সময় দেওয়া হবে। বছরব্যাপী কোনো সময় দেওয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এমন সময় চাওয়ার অর্থ নির্দেশনা পাশ কাটিয়ে যাওয়া। তিন থেকে ছয় বছর সময় চেয়ে আবেদন করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করা হবে। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসের পাশাপাশি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব অস্থায়ী ক্যাম্পাস অবৈধ ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
স্থানান্তর হওয়া সাত বিশ্ববিদ্যালয় : ইউজিসির সময়সীমার মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম স্থানান্তর করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস। দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৯। এর আগে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে আরো ৩৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।