রাজপরিবার ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমানো ব্রিটেনের প্রিন্স ডিউক অব সাসেক্স হ্যারির স্মৃতিকথা
রাজপরিবার ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমানো ব্রিটেনের প্রিন্স ডিউক অব সাসেক্স হ্যারির স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’ বিশ্বজুড়ে বিক্রি হচ্ছে। প্রাচীন এই রাজপরিবারের অনেক অজানা কথা এই বইয়ে উঠে এসেছে। অল্প সময়ের মধ্যে এটি বেস্ট সেলারের তালিকায় উঠে এসেছে। রাজপরিবারের বহু হাঁড়ির খবর প্রকাশ পাওয়ায় বুধবার এক সাক্ষাৎকারে ডায়ানাপুত্র হ্যারি বলেন, বিশ্বাস করুন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমি কিছুই বলিনি। ঘটনার বর্ণনায় বহু কথা প্রকাশ পেয়েছে। খবর বিবিসি ও এএফপির।
কয়েক মাস অপেক্ষার পর বইটি মঙ্গলবার বাজারে আসে। রাজপরিবারের গল্পগাথা শুনতে লাইব্রেরিগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন পাঠকরা। তবে মুখ বন্ধ নেই সমালোচকদেরও। তারা বলছেন, রাজপরিবারের গোপন খবর ফাঁস করে বই বিক্রি করছেন হ্যারি। হ্যারির এই আত্মজীবনী প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রকাশনা কোম্পানি পেঙ্গুইন র্যানডম হাউজ। বিশ্বব্যাপী বইটি ১৬ ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। অনলাইন খুচরা বিক্রেতা অ্যামাজন বুধবার বলেছে, স্মৃতিকথামূলক বইটি ইতোমধ্যে ব্রিটেনে টপ লিস্টে উঠে এসেছে। আত্মজীবনীটি বৃহস্পতিবার স্পেনে প্রকাশিত হয়। সেখানেও পাঠকের তুঙ্গস্পর্শী কৌতূহল দেখা গেছে।
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান ২০২০ সালের শুরুরদিকে ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করেন। তাদের প্রাসাদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত সারাবিশ্বকে নাড়া দেয়। রাজপরিবার ছেড়ে তারা প্রথমে কানাডায় যান। তারপর লস অ্যাঞ্জেলেসে যান। তাদের ঘরে দুই সন্তান রয়েছে। বইটির অনেকাংশজুড়ে রয়েছেন হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়ানা। মা হারানোর বেদনার কথা উল্লেখ করে হ্যারি বলেন, মায়ের মৃত্যুর পর সকালে বাবা চার্লস তাকে জাগিয়ে তুলে খবরটি দেন। তার ভাষায়, ‘তিনি (চার্লস) বিছানার কিনারায় বসেছিলেন।
আমার হাঁটুতে হাত রাখলেন বাবা।’ হ্যারি লিখেছেন, ‘আমি তখন তাকে যা বলেছিলাম তার কিছুই আমার স্মৃতিতে নেই। হয়ত কিছু বলিনি। তবে আমার যা মনে আছে, তা হলো আমি কাঁদিনি। একফোঁটা চোখের পানিও নয়। বাবা আমাকে জড়িয়েও ধরেননি। মায়ের মৃত্যুর কয়েক বছর পর হ্যারি দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত গোপন পুলিশ ফাইলগুলো দেখতে চেয়েছিলেন। হ্যারির ব্যক্তিগত সচিব সেগুলো পেলেও সবচেয়ে ‘চ্যালেঞ্জিং’ ফাইলগুলো সরিয়ে ফেলেন। তবু তিনি পাপারাজ্জিদের তোলা তার মৃত মায়ের অনেক ছবি দেখতে পেয়েছেন।
তিনি বলেন, যেসব লোকজন তার মাকে অনুসরণ করেছিল, দুর্ঘটনার সময় তারা তাকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা করেনি। এমনকি কেউ তাকে সাহায্য কিংবা সান্ত¡নাও দিচ্ছিল না। সবাই শুধু ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে লন্ডনের বইয়ের দোকানগুলো সোমবার মধ্যরাতেই খোলা হয়। এ সময় দোকানগুলোর সামনে লম্বা লাইন পড়ে। এর আগে ১৯৯২ সালে প্রকাশিত প্রিন্স হ্যারির প্রয়াত মা ডায়ানাকে নিয়ে লেখা ‘ডায়ানা : হার ট্রু স্টোরি’ বইটি কিনতে পাঠকদের মধ্যে একই আগ্রহ দেখা গিয়েছিল।
ব্রিটিশ বুক রিটেইলার ওয়াটারস্টোনস জানিয়েছে, প্রিন্স হ্যারির বই ‘এক দশকের মধ্যে তাদের সবচেয়ে বেশি আগাম ক্রয়াদেশ পাওয়া’ বইগুলোর একটি। এই বই বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখা লন্ডনের পিকাডেলির দোকান নির্দিষ্ট সময়ের বহু আগে খোলা হয়। ‘স্পেয়ার’ এর প্রকাশ উপলক্ষে আরও যারা দোকান খোলা রাখার সময় বৃদ্ধি করেছে তাদের মধ্যে আরেক ব্রিটিশ রিটেইলার ডব্লিউএইচ স্মিথের ইউস্টন, ভিক্টোরিয়া, হিথ্রো ও গ্যাটউইকের শাখাগুলোতেও লম্বা লাইন পড়ে। বইটিতে প্রিন্স হ্যারি জানিয়েছেন, তিনি তার নিজের পরিবারের কাছ থেকে নয় বিবিসির ওয়েবসাইট থেকেই প্রথম তার দাদি রানি এলিজাবেথের মৃত্যু সংবাদ পান।
বইয়ের কৃতজ্ঞতা স্বীকার অংশে রাজপরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের বদলে ডিউক অব সাসেক্স হ্যারি যুক্তরাজ্যে থাকা তার এক বন্ধুকে ‘বিশেষ ধন্যবাদ’ দিয়েছেন। এই বন্ধু বিভিন্ন দুঃসময়েও তার পাশে ছিলেন।