সরকার পতনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার ন"/>
Home রাজনীতি ক্ষমতার মসনদ দখল করবে জনগণ -ফকরুল

ক্ষমতার মসনদ দখল করবে জনগণ -ফকরুল

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel
সরকার পতনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার নতুন কর্মসূচি দিয়েছে।

গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে পদযাত্রা শুরু করব। এরপর ধীরে ধীরে উপজেলা, জেলা ও মহানগরে হবে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দিয়ে বর্তমান সরকারের ক্ষমতার মসনদ জনগণ দখল করে নেবে। জনগণের সরকার গঠন করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, আমরা ধীরে ধীরে চলছি। মানুষের অধিকারকে রক্ষা করার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলছি। ঢাকায় ইতোমধ্যে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে সব মানুষের দৃষ্টি আকষণ করতে সক্ষম হয়েছি। সাধারণ মানুষকে নিয়ে লংমার্চের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটা রাষ্ট্র বানাতে চাই।’

ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি সফল করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘গ্রাম-ইউনিয়ন ও উপজেলা-জেলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে চাই। আমাদের বিজয় হবেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ আন্দোলন আমাদের জাতির অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন। সেই লক্ষ্যেই আমরা দশ দফা ও ২৭ দফা প্রণয়ন করেছি। এর মধ্য দিয়েই দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে যে তারা একটি দাবিতে আন্দোলন করছে। সেটা হলো এই অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের পদত্যাগ। আমরা বলে আসছি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না।’

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এটা আরও প্রমাণিত হয়েছে এই উপনির্বাচনে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার হিরো আলমের (বগুড়ার দুটি আসনে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন) কাছেও অসহায়। আজকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে পরাজিত করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবদুস সাত্তার (উকিল আবদুস সাত্তার) যিনি দল ত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাকে আওয়ামী লীগ নিজের লোক মনে করে জয়ী করতে বিরোধী প্রার্থীকে গুম করতে হয়। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিস্থিতি।

বাজারের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সরকার টিকে আছে চাপার জোরে। গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এক লাফে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২৬৩ টাকা বেড়েছে। কী কষ্ট করে মানুষকে সংসার চালাতে হয়।’

আইএমএফের ঋণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে। তারা আজকে ঋণ গ্রহণ করছে। আপত্তি নেই। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ঋণ নিতে হবে, ঋণ নিতে হয়। কিন্তু সেই ঋণের টাকা যদি পাচার করে কানাডার বেগমপাড়াতে গিয়ে বাড়ি তৈরি করেন, ঋণ এনে ফ্ল্যাট কেনেন, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করেন, তাহলে সেই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষ পরিশোধ করবে কেন? ঋণের টাকা আনবে আর আমাদের জনগণের পকেট কেটে টাকা নিয়ে যাবে। মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন মানুষ সরকারের পতন দেখতে চায়, পরিবর্তন দেখতে চায়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার আবার মেগা প্রজেক্ট শুরু করেছে। পাতাল রেলের প্রজেক্ট করেছে। সেই প্রজেক্টে ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আর সাধারণ মানুষকে গরিব-দুস্থ ভাতা দিত, সেই ভাতার টাকা তারা চুরি করে লুট করতে শুরু করেছে। সেই ভাতার টাকাও বন্ধ করে দিচ্ছে। লুটেরাদের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। এই লুটেরার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।’

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখনো সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই পতন ঘটাব। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব। কারাবন্দি সব রাজবন্দিকে মুক্ত করব।’ এ সময় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল। একই সঙ্গে সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।

পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে হাজার হাজার ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেছে। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষ্টি, কালচার নষ্ট করছে। সরকার সংসদ থেকে শুরু করে সবকিছু ধ্বংস করে একটি ব্যর্থ জাতি তৈরি করতে চায়। তারা প্রতিনিয়ত জনগণের ঘৃণা কুড়াচ্ছে।’

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে এই বিভাগীয় সমাবেশ হয়। দুপুর ১২টা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসা শুরু করেন। এতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, গাজীপুর জেলা ও মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকাসহ বিভাগীয় সব সাংগঠনিক জেলার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাজারো নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়। নেতা-কর্মীদের লাল-হলুদ, নীল-সবুজ টুপি পরে অংশ নিতে দেখা যায়। এ সময় তাদের কারও কারও হাতে ছিল জাতীয় ও দলীয় পতাকা। সমাবেশ অনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় দুপুর ২টায়। সমাবেশের এক পর্যায়ে নির্ধারিত বসার জায়গা নিয়ে যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের মধ্যে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে দায়িত্বশীল নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজুলল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, বেনজীর আহম্মেদ টিটু, সাইফুল আলম নিরব, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা মহানগরের তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment