প্রতিবছর যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থীই পাস করতে ব্যর্থ হতো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দেয়ার চল ছিল শিক্ষামন্ত্রণালয়ের। অনেকক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনায় এমপিও বাতিলের নজিরও অহরহ"/>
Home জাতীয় শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অভিনব উদ্যোগ

শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অভিনব উদ্যোগ

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

প্রতিবছর যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থীই পাস করতে ব্যর্থ হতো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দেয়ার চল ছিল শিক্ষামন্ত্রণালয়ের। অনেকক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনায় এমপিও বাতিলের নজিরও অহরহ দেখা গেছে। 

এবারই প্রথম এই ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে সরে এসেছে শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। শাস্তির পরিবর্তে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কেন পরীক্ষায় কৃতকার্য হচ্ছে না, তার কারণ খুঁজতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ অভিনব উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।

যশোর শিক্ষাবোর্ডে এবার এইচএসসিতে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। কিন্তু একজনও শিক্ষার্থী পাস করেনি এমন কলেজের সংখ্যা ৬। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বোর্ড। তবে এর বাইরেও শিক্ষাবোর্ড থেকে ভিন্নধর্মী একটি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শিক্ষাবোর্ড থেকে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ব্যাবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে এই ৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মত বিনিময়ের আয়োজন কার হবে। এর ফলে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে তাদের থেকে পরামর্শ ও ভাল করার কারণ জানতে পারবে এসব কলেজগুলো।

এ বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান আহসান হাবীব জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা ব্যবস্থা নেয়া থেকে তাদের সমস্যা জানার চেষ্টা করবো। এরপর সমস্যা সমাধানের জন্য দিকনির্দেশনাও দেয়া হবে। যশোর বোর্ডে একজনও ফেল করেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৯। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফেল করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেমিনার আয়োজন করা হবে।

এসব প্রতিষ্ঠান কেন ভাল করতে পারছে না এর কারণ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অধিকাংশই নন এমপিও। এরফলে শিক্ষার্থী সংখ্যাও খুব কম। দেখা যাচ্ছে একটি কলেজ থেকে ২ জন পরীক্ষা দিয়ে দইজনই ফেল করেছে। কিন্তু এর ফলে শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তকমা লেগেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষাবোর্ডগুলোর পাঠদানের স্বীকৃতি বন্ধের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারীর চাকরি জড়িত থাকায় তাদেরকে সুযোগ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০২১ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫। এর এক বছর পর এই সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে হয়েছে ৫০। তবে কারণ হিসেবে দেখা গেছে এসব কলেজে শিক্ষার্থীর সংকট, প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষার মান ও ভাল মানের শিক্ষার্থী না থাকার তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য (পিএসসি) ও মাউশির সাবেক মহাপরিচালক মো. গোলাম ফারুক এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, আগে এই ধরনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কলেজকে সরাসরি শাস্তি দেয়া হতো। কিন্তু দেখা গেছে তাতে কোন লাভ হয় না। এখন কারণ ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ।

তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থী শুধু মাত্র শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের মানের কারণে ফেল করে না। যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয় তাদের পড়াশোনার বেসিক, পারিবারিক অবস্থা, লেখাপড়ার মোটিভেশন অনেক কিছু জড়িত। একারণে নানা বিষয় চিন্তা না করে ফেলের কারণে শিক্ষককে ধরে শাস্তি দেয়া ঠিক নয়। যদি দেখা যায় সত্যি সত্যি শিক্ষকের অবহেলার কারণে এমনটি হয়েছে তবে তাদের শাস্তি দেয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৫০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি তাদের তালিকা চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডগুলোকে এ বিষয়ে তথ্য দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মিজানুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, সাধারণ ধারার বোর্ডগুলোর কাছে শূন্যপাস করা প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য চাওয়া হয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, শূন্যপাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে দাঁড়াতে কর্মশালার আয়োজন করা হবে।

এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট অংশ নিয়েছিল ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৩৮ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন, পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। এবার মোট ১৩৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। এর আগের বছর সেই সংখ্যা ছিল ১৯৩৪। অর্থাৎ শুধু শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে শতভাগ পাস করা কলেজের সংখ্যাও কমেছে।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment