রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির উচ্চমূল্যে যখন দিশেহারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, তখনই স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর পরই দেশজুড়ে তৈরি হয় জ্বালানি সংকট। জ্বালানির অভাবে গত বছরের শেষ ছয় মাস ব্যাহত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন। তবে এই গ্রীষ্মে এমনটি যাতে না হয়, সে জন্য ফের স্পট মার্কেটের এলএনজি কেনা শুরু করেছে সরকার।
রই ধারাবাহিকতায় প্রায় সাত মাস পর গত সোমবার এলএনজি বোঝাই কার্গো দেশের বন্দরে এসে ভিড়েছে। আনলোড শেষে শুক্রবার থেকে তা জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকলে দেশের গ্যাস পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন এই কার্গোর এলএনজি নিয়ে জাতীয় গ্রিডে এখন এলএনজি সরবরাহের পরিমাণ সাড়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি জানিয়ে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) এক কর্মকর্তা বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সঞ্চালন লাইনে এলএনজি সরবরাহ হয়েছে ৪৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০ ফেব্রুয়ারি ৪৯০, ২১ ফেব্রুয়ারি ৫২৯ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট।
আগামী সপ্তাহ থেকে সরবরাহ আরও বাড়ানো হবে জানিয়ে আরপিজিসিএলের এলএনজি ডিভিশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী কেএম জহিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি কার্গো থেকে এলএনজি আনলোড করে তা গ্রিডে যোগ করা হয়েছে। স্পট মার্কেট থেকে পরবর্তী কার্গো আসবে ১১ মার্চ। অন্য কার্গোগুলো আসার শিডিউল এখনও ঠিক হয়নি। তিনি আরও জানান, স্পট মার্কেট থেকে আট কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। প্রতিটি কার্গোতে থাকবে এক লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার কিউব এলএনজি।
এলএনজি আমদানি বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জনকণ্ঠকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সব জ্বালানির মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। সেই সময়টা মোকাবিলা করতে হলে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আনতেই হবে। পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই ফের শুরু হলো এলএনজি আমদানি। আশা করি, আসন্ন গ্রীষ্মে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।
বাপেক্স বলছে, বর্তমানে বাপেক্স দৈনিক ১৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) উৎপাদন করছে ৬১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড উৎপাদন করছে ১০৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সব মিলিয়ে এই তিন কোম্পানি দৈনিক ৮৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছে। আর বাকিটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শেভরন আর আমদানি করা এলএনজি। এর বাইরে কাতার থেকে বার্ষিক ১.৮ থেকে ২.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানির চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। ২০১৭ সাল থেকে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কাতারের রাস গ্যাস প্রথম এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে। ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি কার্গো আসে ওমান থেকেও। দেশীয় কোম্পানি সামিট এলএনজি ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জির স্থাপন করা ভাসমান টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপর ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর খোলাবাজার থেকেও এলএনজি আমদানি শুরু করা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের শেষ দিকে সরকার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দিলে দেশে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়।