বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকাসহ অন্যান্য মহানগরের কর্মসূচিতে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন। এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের পাল্টা হিসেবে গত বছরের নভেম্বর থেকে আওয়ামী লীগও একই দিন কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের দিন থেকে ক্ষমতাসীনরা রাজপথে অবস্থান নেওয়া শুরু করে। তখন থেকেই পাল্টা কর্মসূচি শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ জানায়, ঢাকা মহানগরের ১১ থানায় শান্তি সমাবেশ করবে দলটি। ঢাকা মহানগর উত্তরে চার থানায় এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাত থানায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
ঢাকা উত্তরের সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৮ ও ঢাকা-১৯-এ চারটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ঢাকা-৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০-এর সাতটি সংসদীয় আসন এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করবে সরকারি দল।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, বিএনপিকে বাধা দেওয়া বা তাদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি সমাবেশ পালন করা হচ্ছে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারেন, সে জন্য মাঠে থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কোথাও সন্ত্রাস ও নাশকতার চেষ্টা দেখলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করবেন। এ উদ্দেশ্যেই থানাগুলোতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
শ্যামপুর-কদমতলী থানার সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম, যাত্রাবাড়ী-ডেমরার সমাবেশে দলের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন উপস্থিত থাকবেন। ওয়ারী, গেণ্ডারিয়া ও সূত্রাপুরের সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। লালবাগ, চকবাজার, কোতোয়ালি ও বংশালে উপস্থিত থাকবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ ও শাহজাহানপুরে উপস্থিত থাকবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন। মুগদা, সবুজবাগ ও খিলগাঁওয়ে থাকবেন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু। কলাবাগান, হাজারীবাগ, নিউ মার্কেট ও ধানমণ্ডির আয়োজনে শান্তি সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘জনগণের শান্তি ও জানমালের নিরাপত্তায় আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে। আমরা কাউকে কোনো উসকানি দেব না। তবে কেউ আক্রমণ চালালে তা প্রতিহত করা হবে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা মহানগরের থানাগুলোতেও শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন জানান, রাজশাহী মহানগরের প্রতিটি থানায় আওয়ামী লীগের মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা উপস্থিত থাকবেন।
মহানগর বিএনপির সামর্থ্য যাচাইয়ের পরীক্ষা
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগ জানায়, ঢাকা মহানগর উত্তরে ২৭, দক্ষিণে ২৪, নারায়ণগঞ্জে ৩, গাজীপুরে ৮, চট্টগ্রামে ১৫, রাজশাহীতে ৪, খুলনায় ৫, বরিশালে ৩, রংপুরে ৬ ও সিলেট মহানগরের ৫ থানায় পালন করা হবে এ কর্মসূচি।
এ ছাড়া তিন মহানগরে থানা কমিটি না থাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি আট স্থানে এই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩৩ ওয়ার্ড পাঁচ স্থানে, ফরিদপুরে ২৭ ওয়ার্ড এক স্থানে ও কুমিল্লা মহানগরের ২৭ ওয়ার্ড দুই স্থানে পদযাত্রা বের করবে।
গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, দমন-নিপীড়ন বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে হবে এই পদযাত্রা। গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশব্যাপী সব মহানগরের অন্তর্গত থানায় পদযাত্রা সফল করতে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আহ্বায়ক আবদুস সালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করি, সরকার বাধা দেবে না। বাধা এলেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি সফল করার প্রস্তুতি নিয়েছি।’
কর্মসূচি সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সমন্বয় টিম গঠন করেছে বিএনপি। এ টিমে থাকা নেতারা মহানগরের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। ঢাকা মহানগর উত্তরা পূর্ব থানায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দক্ষিণের শাহবাগে মির্জা আব্বাস, বংশালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অন্যান্য থানায় ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা থাকবেন।
চট্টগ্রাম মহানগরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কুমিল্লায় বরকতউল্লা বুলু, নারায়ণগঞ্জে ফজলুর রহমান, সিলেটে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খুলনায় শামসুজ্জামান দুদু, ফরিদপুরে আহমেদ আযম খান, রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনু, গাজীপুরে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরিশাল মহানগরে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, রংপুরে আসাদুল হাবিব দুলু ও ময়মনসিংহে কেন্দ্রীয় নেতা শরিফুল আলম ও ওয়ারেস আলী মামুন।
এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোও একই কর্মসূচি পালন করবে। গণমঞ্চের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে তারা কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত পদযাত্রা করবে।
১২ দলীয় জোট সকাল ১১টায় বিজয়নগরে পানির ট্যাংকির কাছে সমাবেশ করে পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড় ও কালভার্ট সড়ক হয়ে বিজয়নগরে পানির ট্যাংকি পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তারা সকাল ১১টায় বিজয় নগরে আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব ঘুরে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। এ ছাড়া সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট সকাল ১১টায় পুরানা পল্টন মোড়ে থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।