আজ মঙ্গলবার পবিত্র  শবেবরাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় আজ রাতে মহান আল্লাহর রহমত কামনায় নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে পবিত্র  শবেবরাত পালন করবেন। হিজরি বর্ষের শাবান মাস"/>
Home জাতীয় আজ পবিত্র শবেবরাত

আজ পবিত্র শবেবরাত

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

আজ মঙ্গলবার পবিত্র  শবেবরাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় আজ রাতে মহান আল্লাহর রহমত কামনায় নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে পবিত্র  শবেবরাত পালন করবেন। হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত সৌভাগ্যের রজনী। মহিমান্বিত এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এ রাতে মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকারসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগি করে থাকেন। 

শবেবরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বলেন, মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়।  শবেবরাতের এই পবিত্র রজনীতে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে অশেষ রহমত ও বরকত কামনার পাশাপাশি দেশের অব্যাহত অগ্রগতি, কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের প্রার্থনা জানাই। সৌভাগ্যম-িত পবিত্র  শবেবরাতের পূর্ণ ফজিলত আমাদের ওপর বর্ষিত হোক।
পবিত্র  শবেবরাত উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলমানকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে পবিত্র  শবেবরাতের মহাত্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
অপরদিকে পবিত্র  শবেবরাত উপলক্ষে বাদ মাগরিব ও বাদ এশা এবং রাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র  শবেবরাত এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন দিনি প্রতিষ্ঠান মসজিদ মাদ্রাসা ও সংগঠন এ রাতের  এবাদত বন্দেগি বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে।
সৌভাগ্যের এই রজনী সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি ১৪ শাবানের রাতে নামাজ আদায় করে, তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং সদ্য প্রসূত নবজাতক শিশুর মতো গুনাহ থেকে পবিত্র হবে। যে ব্যক্তি ১৫ শাবানের দিন রোজা রাখবে, সে দোজখের আগুন থেকে মুক্তি পাবে। এ রাতের ইবাদতের কোনো সীমারেখা বা নির্ধারিত কোনো নিয়ম নেই।

অন্যান্য নফল নামাজের মতো ২ রাকায়াত করে নফল নামাজের নিয়তে নামাজ আদায় করলেই  শবেবরাতের নামাজ আদায় হয়ে যাবে। পুণ্যময়  শবেবরাতের নামাজের সঙ্গে সঙ্গে পবিত্র কুরআন হাদীস পাঠ ও বিভিন্ন রকম দোয়া-দরুদ এবং তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির করলেও যথেষ্ট নেকী পাওয়া যায়।
হিজরি শাবান মাস একটি মোবারক মাস। হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে তিনি এ মাসকে পালন করতেন। এ মাসের একটি রাতকে মুসলমানরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, মধ্য শাবানের এই রাত ‘শবেবরাত’ হিসেবে পরিচিত। আজ সেই মহিমান্বিত রাত। এ ছাড়া ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ সৌভাগ্য। এ দু’টি শব্দ নিয়ে ‘শবেবরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনী। আরবিতে একে বলে লাইলাতুল বরাত। ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে শবেবরাতকে ‘ভাগ্যরজনী’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
এ রাতেই আল্লাহতায়ালা বান্দাদের জন্য তার অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। মহিমান্বিত এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি ও পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় আল্লাহর দরবারে সকাতরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মুসলমানরা শবেবরাতে নফল নামাজ, জিকির-আজকার, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিনিদ্র রাত কাটায় ও আল্লাহতায়ালার কাছে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য।

এদিকে বাঙালি মুসলিম সমাজে শবেবরাতের একটি আনন্দঘন সামাজিক দিকও রয়েছে। এদিন মুসলমানদের বাড়িতে সাধ্যানুযায়ী হালুয়া পায়েস রুটিসহ নানা উপাদেয় খাবার রান্না করা হয়। এসব খাবার আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে পাঠানো এবং গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হয। অনেকে মুক্ত হস্তে দান-খয়রাতও করে থাকেন। বরাবরের মতোই শবেবরাতের পরদিন অর্থাৎ আগমীকাল বুধবার সরকারি ছুটি থাকবে।

শবেবরাতের বরকত, ফজিলত ও মর্যাদা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরেক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। আটজন সাহাবির সূত্রে বিভিন্ন সনদে এই হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, শবেবরাত ফজিলতময় এবং এ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের ক্ষমা করে থাকেন। তবে ক্ষমা পাওয়ার শর্ত হলো- শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা।

এ দু’টি বিষয় থেকে যারা মুক্ত থাকবেন তারা কোনো অতিরিক্ত আমল ছাড়াই এ রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করবেন। কিন্তু শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হতে না পারলে অন্য আমল দিয়ে ওই রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করা যাবে না। দুঃখের বিষয় হলো, শবেবরাতে আমরা অনেক নফল আমল করলেও ওই দু’টি শর্ত পূরণের চেষ্টা খুব কম মানুষই করে থাকি।
এদিকে বরকতময় এই রজনীতে মহান আল্লাহর রাব্বুল আলামিনের কাছে গোনাহ মাফের সর্বোচ্চ সুযোগ কাজে লাগানোর উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন দেশের আলেম ওলামাগণ। তাদের মতে- এই রাতে অনেকে আতশবাজি করেন। এটা অনুচিত কাজ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি বেদআত কাজ। এই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে নিয়োজিত করাই শ্রেয়।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment