সংসদ নির্বাচনে ইসি সেনা মোতায়েন যৌক্তিক মনে করে। তবে কোনো দলকে নির্বাচনে আসতে চাপ দেবেনা। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের মতামত জানিয়েছে ইসি। সাংবিধানিক সংস্থাটি বলেছে, নির্বাচনে আসতে কোনো দলকে বাধ্য করা যাবে না। তারা সেই ধরনের কোনো প্রয়াসও নেবে না। তবে সব দলকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত আন্তরিকভাবেই আহ্বান করে যাবে ইসি। আর নির্বাচনে অধিকাংশ দলের সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবকে ‘যৌক্তিক’ বলে মত দিয়েছে ইসি। সম্প্রতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে আসা প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে কমিশন গতকালের বৈঠকে এসব মতামত দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন গত জুলাই মাসে দেশের ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টির সঙ্গে সংলাপ করেছে। ৯টি দল এই সংলাপ বর্জন করে। বাকি দুটি দলের সঙ্গে সেপ্টেম্বরে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়ালের সই করা এই মতামত গতকাল সোমবার ইসির যুগ্ম সচিব (পরিচালক-জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি তার সুপারিশে বলেছে- কমিশন নির্বাচনে সব দলের বিশেষত প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করে।
অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির ব্যবহার ও প্রভাব প্রতিরোধ, রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগের সুপারিশের বিষয়ে ইসি বলেছে- সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধানের অধীনে সব ক্ষমতা যথাযথভাবে প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সৃষ্ট সব বাধা ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করা হবে। কারচুপির সম্ভাব্য সব সুযোগ প্রতিরোধ করে সঠিক ও নিরপেক্ষ ফলাফল নিশ্চিত করতেও সততা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা ও সর্বোপরি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে যাবে। আগামী নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা এবং অন্যান্য বিভাগ থেকে কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেবার বিষয়টি কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে দেখবে বলে কমিশন বৈঠকে জানানো হয়েছে। নির্বাচনে জয় পরাজয় অনিবার্য উল্লেখ করে ইসি বলেছে, প্রার্থীদের জয় পরাজয় মেনে নিতে হবে। পরাজয় মেনে না নেয়ার মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। ইসি বলেছে, অর্থশক্তি ও পেশিশক্তি দেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচনি সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে অপচর্চার মাধ্যমে অপশক্তি হিসেবে অবাঞ্ছিত স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে। এমন অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অবশ্যই সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বে সমঝোতা ও মতৈক্য প্রয়োজন।
ভোট চলাকালীন ভোটকেন্দ্রে ভোট কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য সাংবাদকর্মী এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ দেয়ার পক্ষে অভিমত
ব্যক্ত করে ইসি বলেছে- দেশি এবং বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভোট পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব?্যবহার বিষয়ে ইসির মতামত হলো- ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি এবং সমর্থন দুই-ই রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত রাজনৈতিক সংলাপ ছাড়াও ইতিপূর্বে ইভিএম নিয়ে আরো সংলাপ, কর্মশালা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। কমিশন ইভিএমের সার্বিক বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। রাজনৈতিক সংলাপ ছাড়াও ইতিপূর্বে ইভিএম নিয়ে আরো যেসব কর্মশালা, মতবিনিময়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, তার সার্বিক ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার বিষয়ে ইসি যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও বৈঠকে জানান হয়েছে।