Home Lead 2 দিল্লিতে মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে গঙ্গার পানি সর্বোচ্চ ব্যবহারে ঐকমত্য

দিল্লিতে মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে গঙ্গার পানি সর্বোচ্চ ব্যবহারে ঐকমত্য

দ্রুত তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে চেষ্টা চালাবে ভারত * কুশিয়ারার পানি উত্তোলনে এমওইউ সম্পাদনে আশ্বাস

by Nahid Himel

গঙ্গা চুক্তি নবায়নের আগে এর পানির সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বাংলাদেশ ও ভারত মতৈক্যে পৌঁছেছে। এ ব্যাপারে গঠিত যৌথ কমিটি শিগগিরই বৈঠকে বসবে।

গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি এবং তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে কমিটি কাজ করবে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদনে চেষ্টা চালাবে ভারত। বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কুশিয়ারা নদী থেকে পানি উত্তোলনে সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকালে এমওইউ সই হতে পারে। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং সিখাওয়াত।

ভারতীয় প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দেশটির পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পঙ্কজ কুমার। দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে এই বৈঠক হলো এক যুগ পর। এর আগে ২০১০ সালে জেআরসি মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়েছিল। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ঘিরে সৃষ্ট জটিলতায় স্থবির ছিল পানি আলোচনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের আগে জেআরসি বৈঠক হলেও শিগগিরই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ অবশ্য তিস্তা চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের তাগিদ দিয়েছে।

ভারতীয় পক্ষ দ্রুততম সময়ে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। পাশাপাশি গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নবগঠিত কারিগরি কমিটির বৈঠক দ্রুত অনুষ্ঠানের ব্যাপারেও জোর দেওয়া হয়। বৈঠকে ভারতের নদী সংযোগ প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়।

বৈঠকে যোগ দিতে কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা সোমবার দিল্লি যান। তারা মঙ্গল ও বুধবার দুই দিন আলোচনা করে মন্ত্রীদের বৈঠকের জন্য আলোচনার রূপরেখা চূড়ান্ত করেন। বৃহস্পতিবার জেআরসি মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমও যোগ দেন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল আজ দেশে ফিরবে। বৈঠকের একটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, গঙ্গা চুক্তির নবায়নের বিষয় নিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং সিখাওয়াত একান্তে কথা বলেছেন।

কুশিয়ারা নদীর পানির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ পাঁচ হাজার একর জমির জন্য একটা সেচ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটির জন্য কুশিয়ারা থেকে পানি উত্তোলন করা দরকার। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কুশিয়ারা থেকে বাংলাদেশ শুকনো মৌসুমে ১৫৬ কিউসেক পানি উত্তোলন করতে আগ্রহী। ভারতও সমপরিমাণ পানি উত্তোলন করবে। এ ব্যাপারে একটা খসড়া এমওইউ প্রস্তুত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে এমওইউ সই হতে পারে। তিস্তার প্রসঙ্গ বাংলাদেশ তুলেছে। বাংলাদেশ দ্রুত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি চেয়েছে। এছাড়া ছয়টি অভিন্ন নদীর একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি করার আলোচনা আগেই শুরু হয়েছে। এ ছয় নদী হলো-মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতি, ধরলা ও দুধকুমার।

এ বিষয়ে আরও একটি এমওইউ করার কথা বলেছে বাংলাদেশ। এটার পর আরও ৭-৮টি নদীর জন্য একত্রে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ।

অভিন্ন নদীগুলোর জন্য অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবারের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বন্যার পূর্বাভাস নিয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি স্টেশন থেকে ভারত বন্যার পূর্বাভাস বাংলাদেশকে দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ আরও দূরবর্তী আটটি স্টেশন থেকে বন্যার পূর্বাভাস চায়। সীমান্ত নদীগুলোর তীর সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিএসএফ বাধা দিয়ে থাকে। এ ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়। গঙ্গা নদীর পানি যাতে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় এ বিষয়ে নতুন একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অংশের ১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভারত তাদের কমিটি নিয়ে বাংলাদেশের কমিটির সঙ্গে যাতে দ্রুত বৈঠকে বসে সে বিষয়ে আলোচনা হয়।

ফেনী নদী থেকে ভারত সাবরুম শহরের খাবার পানির চাহিদা মেটাতে এক দশমিক আট কিউসেক পানি উত্তোলন করবে বলে আগেই চুক্তি হয়েছে। এখন এই চুক্তি কীভাবে কার্যকর হবে সে বিষয়ে ভারত সহযোগিতা চেয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালে ২৫ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তিতেই উভয় দেশ গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ ব্যবহারে স্টাডি করবে বলে উল্লেখ আছে। ২০২৬ সাল নাগাদ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবায়নের জন্যও উভয় দেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। তার মধ্যে কেবল গঙ্গার পানিবণ্টনে চুক্তি রয়েছে। তিস্তা চুক্তির খসড়া প্রস্তুতির পর সচিব পর্যায়ে সই হয়। ২০১১ সালে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে মন্ত্রী পর্যায়ে চুক্তিটি সই হওয়া চূড়ান্ত হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর শেষ মুহূর্তে আপত্তির কারণে তিস্তা চুক্তি মন্ত্রী পর্যায়ে সই হতে পারেনি।

মমতা ব্যানার্জি ওই সময়ে মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও তিনি সফরসঙ্গীর তালিকা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। তারপর ভারতের তরফে বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তিস্তা চুক্তি এখনো সম্পাদন হয়নি।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment