Home ৬৪ জেলা প্রথম চাষেই লাভবান শরণখোলার বিপুল মাঝি

প্রথম চাষেই লাভবান শরণখোলার বিপুল মাঝি

অফ সিজনের তরমুজ

by Nahid Himel
বাগেরহাটের শরণখোলার সফল সবজি চাষি বিপুল চন্দ্র মাঝি (৩৫)। সবজির পাশাপাশি অফ সিজনে তরমুজ চাষ করার শখ তার দীর্ঘদিনের। কিন্তু এই নতুন ফসল চাষের পদ্ধতি জানা ছিল না তার। এ বছর তিনি কৃষি অফিসে গিয়ে চাষ পদ্ধতি রপ্ত করে শুরু করেন এই তরমুজ চাষে প্রথমবারেই সফল হয়েছেন তিনি। এখন তার ক্ষেতের মাচায় ঝুলছে বিভিন্ন রঙের শত শত অসময়ের এই রসালো ফল তরমুজ। কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, অফ সিজনের তরমুজ ব্যাপক লাভজনক ফসল। এই তরমুজ চাষে অন্যান্য ফসলের চেয়ে খরচ কম এবং লাভ বেশি। তা ছাড়া দুই মাসের মাথায়ই ফলন আসে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় অফ সিজনের তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে চাষিদের। উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর গ্রামের বিমল চন্দ্র মাঝির ছেলে বিপুল চন্দ্র মাঝি বাড়ির পাশের এক একর জমি বর্গা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। সেই ঘেরের বেড়ির চারপাশে মাচা করে সাত-আট বছর ধরে লাউ, শসা, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করছেন। এসব সবজির পাশাপাশি তার মনে স্বপ্ন জাগে অফ সিজনের তরমুজ চাষের। তার সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। চাষি বিপুল চন্দ্র মাঝি বলেন, ‘অফ সিজনের তরমুজ চাষের আমিই শরণখোলার প্রথম চাষি। অন্যান্য শাক-সবজির পাশাপাশি আমার দীর্ঘদিনের আশা ছিল অফ সিজনে কিভাবে তরমুজ চাষ করা যায়। পরে কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে চাষ শুরু করি। আমাকে কৃষি অফিস থেকে সুগার কিং জাতের তরমুজের বীজ, সার এবং কীটনাশক দিয়ে সহায়তা করেছে। ২৮ জুন চারা রোপণ করার পর ৬০-৬৫ দিনের মাথায়ই ফলন আসে। কৃষি অফিসের সহায়তায় আমি তরমুজ চাষে সফল হয়েছি। ’ তিনি বলেন, ‘তরমুজ চাষাবাদে সেচ ও অন্যান মিলিয়ে আমার প্রায় ১৪ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত দুইবারে প্রায় ১০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। বর্তমানে আমার ক্ষেতে দুই শতাধিক বড় আকারের তরমুজ রয়েছে। এসব তরমুজ আগামী এক সপ্তাহর মধ্যে বিক্রির উপযোগী হবে। যা ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। এ ছাড়া গাছে ছোট আকারের আরো কয়েক শ তরমুজ ধরেছে। গাছ এখন যে পর্যায়ে আছে তা থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে আশা করি। ’ বিপুল মাঝি বলেন, ‘অফ সিজনের তরমুজ চাষ একটি লাভজনক ফসল। এতে খরচের তুলনায় লাভ বেশি। আমার সফলতা দেখে এলাকার অন্য চাষিরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। আগামী বছর আরো ব্যাপকভাবে চাষের আশা রয়েছে। আমার ক্ষেতের ফলন দেখে এলাকার অনেকে চাষি এই তরমুজ চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমি চাই এই অফ সিজনের তরমুজ চাষ করে অন্যরাও লাভবান হোক। ’ ক্ষেতের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিবুল ইসলাম মনি বলেন, ‘অফ সিজনের তরমুজ চাষাবাদে সার্বক্ষণিক প্রদর্শনী চাষিকে পরামর্শ দিয়ে আসছি। কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রথম চাষেই সফল হয়েছেন চাষি বিপুল মাঝি। তরমুজের ফলন দেখে এলাকার অন্য চাষিদের মাঝেও ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ’ শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, ‘খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় শরণখোলায় এই প্রথমবার অফ সিজনের তরুমুজ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আমাদের প্রথম চাষি বিপুল চন্দ্র মাঝি। তাকে বীজ, সার, কীটনাশকসহ সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রথমবারেই আমরা সফল হয়েছি। ’

কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার আরো বলেন, ‘অফ সিজনের তরমুজ চাষ খুবই লাভজনক। আমরা উপজেলার সকল চাষিকে এই তরমুজ চাষে উৎসাহিত করছি। আগামী বছর বহু চাষি অফ সিজনের তরমুজ চাষের ইচ্ছা পোষণ করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে আমার সার্বিক সহযোগিতা করব চাষিদের।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment