যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোটে লিজ ট্রাস দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিই হবেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী। আজ বরিস জনসন ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বিদায় নেয়ার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিজ ট্রাসকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা তার নেতৃত্বের মাধ্যমে ব্রিটেনকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে সে দেশের জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা বৃদ্ধি করবেন তিনি আশাবাদী।
দলের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত ৭ জুলাই পদত্যাগের ঘোষণা দিলে ক্ষমতাসীন দর কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা ও নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
জ্বালানি খরচ কয়েক গুণ বেড়ে অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকতে থাকা যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের আশ্বাসের বাণী শোনান ট্রাস। কর কমানোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সামনে এগিয়ে নিতে ‘বলিষ্ঠ পরিকল্পনা’ রয়েছে বলে জানান তিনি। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনেও আবার লেবার পার্টিকে হারিয়ে দেবেন বলে এ সময় ঘোষণা দেন।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা লিজ ট্রাস ছাত্রজীবনের শুরুতে মধ্যপন্থি লিবারেল ডেমোক্রেটিক
পার্টির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরে তিনি ডানপন্থি কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন। ২০১০ সালে তিনি প্রথম দল থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কনজারভেটিভ পার্টির পেছন সারি থেকে যেভাবে সরকারের শীর্ষ পদে তার দ্রুত উত্থান ঘটেছে, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে।
ট্রাস ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ছিলেন। তবে ব্রিটিশরা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিলে তিনি দ্রুত এর কট্টর সমর্থক হয়ে ওঠেন। এরপর ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন লিজ ট্রাসকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে গঠিত প্রতিনিধি দলের প্রধান করেছিলেন। গত বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ট্রাস।
লিজ ট্রাস যেসব পোশাক পরেন এবং ছবি তোলার জন্য যেসব জায়গা বেছে নেন, যেমন এস্তোনিয়ায় গিয়ে ট্যাংকে এবং মস্কোয় গিয়ে পশমের টুপি পরে ছবি তোলা ইত্যাদি কারণে অনেকে তাকে প্রথম নারী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তুলনা করেন। ইউক্রেন ইস্যুতে তিনি রাশিয়ার কঠিন সমালোচক হিসেবে পরিচিত।
লিজ ট্রাস এমন এক সময়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে চলেছেন, যখন দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ বিরাট সংকটের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আসন্ন শীত মৌসুমে ইউরোপে জ্বালানি গ্যাসের ঘাটতির কারণে যে সংকট তৈরি হবে, সেটিই নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।