কোন্দল বিএনপির পিছু ছাড়ে না , তৈমুরেই তৃণমূলের ভরসা। দলের দুর্দিনেও কোন্দল যেন পিছুই ছাড়ছে না নারায়ণগঞ্জ বিএনপির। ৩ বছর পর কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করার সপ্তাহ না পেরুতেই ৪১ সদস্যের কমিটির ১৫ জনই পদত্যাগ করেছেন। ফলে নবগঠিত মহানগর বিএনপির কর্মসূচি পালন করতে নির্ভর করতে হচ্ছে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ওপর।
রোববার মহানগর বিএনপির প্রথম কর্মসূচিতেই দেখা মেলেনি নতুন কমিটির অধিকাংশ সদস্যের। নগরীর শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা না আসলে পুরো অনুষ্ঠানই ফ্লপ হয়ে যতে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ নিয়ে চরম সমালোচনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে মহানগর বিএনপির ২৭টি ওয়ার্ডের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে। তারা বলছেন, মহানগর বিএনপির যে আহবায়ক কমিটি কেন্দ্র থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার বেশির ভাগ সদস্যই ১১,১২ ও ১৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। অথচ ২৭টি ওয়ার্ডের বিএনপিপন্থি অধিকাংশ কাউন্সিলর ও সিনিয়র নেতারা এই কমিটিতে স্থান পাননি।
এদিকে দলটির ত্যাগী ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন সেই অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের কাছে, যাকে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
রোববার তৈমুর আলম খন্দকারের বাসভবনে জেলা ওলামা দলের মরহুম সভাপতি সামসুর রহমান বেনু ও নিহত যুবদল কর্মী শাওন প্রধান স্মরণে আয়োজিত দোয়ার মাহফিলে ওই ১৫ জন পদত্যাগকারী নেতা তাদের পদত্যাগপত্র তৈমুরের হাতে তুলে দেন।
দলীয় সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির বর্তমান আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলেও ২০১৬ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর তাদের বিরোধ শুরু হয়।
অ্যাডভোকেট টিপু ওই সময় অভিযোগ করেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থী এড.সাখাওয়াত আওয়ামীপন্থি একটি অংশের কাছ থেকে ২ কোটি টাকা আনলেও তা খরচ করেননি। এ নিয়ে দলের মধ্যে নানা টানা পোড়ন শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সেই সাখাওয়াতকে নিয়েই কর্মসূচিতে থাকছেন টিপু। শেষ পর্যন্ত গত ১৩ সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্যের নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে কমিটি ঘোষণার পরপরই শুরু হয় সমালোচনা ও পদত্যাগের হিড়িক। অভিযোগ উঠে, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাদের এই কমিটিতে স্থান না দিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও নিষ্ক্রিয়দের স্থান দেয়া হয়েছে।
দলের কর্মীরা জানান, মহানগর বিএনপির আগের কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ৩ বারের বিএনপিদলীয় এমপি ছিলেন, তার বাবাও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও এমপি ছিলেন। অথচ তাকেই স্থান দেয়া হয়নি। বিএনপির কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে অর্ধশতের বেশি মামলার আসামি হওয়া আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, করোনা যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদসহ সিটি করপোরেশনের বেশিরভাগ বিএনপিপন্থি কাউন্সিলররাই এই কমিটিতে নেই। অথচ গত এক যুগে নারায়ণগঞ্জে আসেননি, দলের কোনো কর্মসূচিতে না থাকলেও এই কমিটিতে পদ দেয়া হয়েছে। এমএইচ মামুন, মনির খান, মাহাবুব উল্লাহ তপন, হাসান আহমেদ, ফতেহ রেজা রিপনকে। এর মধ্যে পরের তিনজনই তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং দলের কোনো কর্মসূচিতে দেখা মেলেনি।
এদিকে মহানগর বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা ভিড় জমাচ্ছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের কাছে। রোববার তৈমুর আলম খন্দকারের বাসভবনে আয়োজিত এক দোয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দেন শত শত বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেখানে মহানগর বিএনপির ১৫ জন সদস্যই পদত্যাগপত্র তুলে দেন তার কাছে।
এ সময় পদত্যাগকারী নেতা আমিনুর ইসলাম মিঠু জানান, মহানগর বিএনপির যে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটিকে আইনজীবীদের কমিটি বলতে পারেন কারণ ৪১ জনের ৯ জনই আইনজীবী নেতা। তাছাড়া ২৭টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বা নেতারাও এই কমিটিতে নেই। এখানে অধিকাংশই নগরের ১১ থেকে ১৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
তিনি বলেন, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলমের নেতাকে বিএনপিতে ফিরিয়ে না আনলে দল মুখ থুবড়ে পরবে। অপর পদত্যাগকারী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা বলেন, যারা দলকে দুর্বল করেছিল, বিভক্তি সৃষ্টি করেছিল, যাদের বিচার হওয়া উচিত ছিল তারাই দল থেকে পুরস্কৃত হয়েছে।
পদত্যাগকারী যুগ্ম আহবায়ক ও বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল জানান, যারা দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ দিয়ে আসছেন তাদেরকেই মাইনাস করার মানে হল বিএনপিকে দুর্বল করা। যারা পদত্যাগ করেছে তারা সবাই পরীক্ষিত ও ত্যাগী। তাই কেন্দ্রের উচিত বিষয়টি ভেবে দেখা কেন এই পদত্যাগের হিড়িক পড়ল।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার জানান, দলের জন্য কাজ করতে পদ লাগে না, কর্মী হয়েও করা যায়। আমার পদ নেই, আমি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হলেও আমার মন থেকে শহীদ জিয়ার আদর্শ এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বকে মুছে দেওয়া যাবে না। আমার সৌভাগ্য কর্মীরা এখনো আমার ওপর আস্থা রাখেন।