Home শিক্ষাঙ্গণ নাট্যকার ও রাবি অধ্যাপক মলয় ভৌমিক শিল্পকলা পদক পেলেন

নাট্যকার ও রাবি অধ্যাপক মলয় ভৌমিক শিল্পকলা পদক পেলেন

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ অবদান রাখায় নাট্যকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি)  ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা মলয় কুমার ভৌমিক  শিল্পকলা পদক পেলেন ।

গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তাঁকে এ পদক তুলে দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

শিল্পকলা পদক পাওয়ায় অনুভূতি জানতে চাইলে অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক  বলেন, পদক পেয়ে নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি। আমি এর আগেও বাংলা একাডেমিক পদক পেয়েছি। পদক পাওয়াতে আমার স্বার্থকতা নিহিত নয়। মানুষকে জাগ্রত করা আমার কাজ সেই কাজটি আজ সারাদেশে ব্যাহত হচ্ছে। হ্যাঁ, পদক আমার প্রেরণার উৎস হতে পারে কিন্তু এ পদক না পেলেও আমার কাজ আমি আজীবন করে যাবো।

তিনি বলেন, আমার সব থেকে বড় পদক হচ্ছে যখন আমি দর্শকদের মুখোমুখি হই এবং শিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরি। দর্শকরা যখন সেটির প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ পদক। দর্শকের ভালোবাসার চেয়ে আর বড় পদক হতে পারে না বলে জানান এ অধ্যাপক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম  বলেন, এটা অবশ্যই আমাদের আনন্দের বিষয়। জাতীয় পর্যায়ে আমাদের শিক্ষকরা পুরস্কার পাচ্ছেন এটা গর্বের। শিক্ষকদের কাছে আমার প্রত্যাশা থাকবে সবাই যেন জাতীয় স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেন।

উল্লেখ্য,  মালয় ভৌমিক জন্ম১৯১সালের  মে মাসে কানসোনার একটি গ্রামে, উল্লাহপাড়া, সিরাজগঞ্জ জেলা, বাংলাদেশ। তাঁর বাবা শিবেন্দ্র নাথ ভৌমিক ছিলেন একজন সম্মানিত কলেজের অধ্যক্ষ এবং তাঁর মা- নিয়তি ভৌমিক- একজন গৃহকর্মী। মালয় ভৌমিক তিন ভাই ও তিন বোনের তৃতীয় ভাইবোন। 1983 সালে, মালে ভৌমিক একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন । একসাথে তাদের একটি কন্যা রয়েছে: বার্নানা ভৌমিক। তিনি বর্তমানেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ।

মালয় ভৌমিক ১৯৭৮সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিতে এম.কম (মাস্টার্স অফ কমার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।

বর্তমানে মালয় ভৌমিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন বাংলাদেশী নাট্যকার, অভিনেতা, পরিচালক ও শিক্ষাবিদও।

মালয় ভৌমিক ১৯৮২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।২০০৩-২০০৬ সাল থেকে তিনি একই বিভাগের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত থিয়েটার এবং সংগীত বিভাগের চেয়ারপারসন ছিলেন। শৈশবকাল থেকেই মলয় ভৌমিক শিল্পকলা সম্পাদন সম্পর্কে আগ্রহী এবং সৃজনশীল ক্রিয়াকলাপে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। বহু বছর ধরে, ভৌমিক একটি থিয়েটার ব্যক্তিত্ব।

একজন সাংবাদিক হিসাবে তাঁর ক্যারিয়ারটি একজন শিক্ষাবিদ হিসাবে তাঁর ক্যারিয়ারের চেয়ে কম সুপরিচিত নয়। ১৯ ৬৭থেকে  ভৌমিক দেশের উল্লেখযোগ্য পত্রিকা দৈনিক সংবাদে সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেছিলেন। নব্বইয়ের দশকে, মালয় ভৌমিক এর জন্য কলাম লিখেছিলেন দৈনিক সংবাদ উত্তরার উলুখাগড়ার নাম অনুসারে। তিনি এখন একজন সুপরিচিত কলাম লেখক ।

ভৌমিক ১৯৮৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরবর্তী ৭ বছর (১৯৮৮-১৯৯৩) তিনি এই জোটের আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি মুক্তো নাটকের (ওপেন ড্রামা) জাতীয় কমিটির সেক্রেটারিয়াল কমিটির সদস্য ছিলেন। মালয় ভৌমিক অসংখ্যবার বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট (বাংলাদেশ কেন্দ্র) এর অন্যতম নির্বাহী সদস্য। ২০১০ সাল থেকে তিনি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি.।

তিনি একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ।২০০০-২০০২ অবধি, ভৌমিক বোর্ড অফ গভর্নর সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় । তিনি কেবল থিয়েটারে উন্নত প্রশিক্ষণই পাননি, সাংবাদিকতা, এবং শিক্ষা কিন্তু তাঁর জ্ঞান ভাগ করে নেয়ার জন্য তাদের উপর কয়েকটি কর্মশালা এবং সেমিনারও পরিচালনা করেন।

নামকরণ করা থিয়েটার গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হলেন মালয় ভৌমিক অনুশীলন নাট্যাদাল যা ১৯৭৯  সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি সংস্কৃতি ও থিয়েটার ফর ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও রয়েছেন।

মালয় ভৌমিক এ পর্যন্ত৩৫ টিরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০পর্যন্ত ভৌমিকবাংলাদেশ বেতার, রাজশাহীর একজন নিয়মিত অভিনেতা ছিলেন । তিনি নাট্যকার হিসাবে কাজ করেছেন বিটিভি এবং অন্যান্য বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশনে। টিভি নাটকগুলির মধ্যে মলয় ভৌমিককে ‘আত প্রহোলার গোলপো’, ‘সুন্দরি’ (ধারাবাহিক নাটক) এবং ‘বিশ্বাস’ ছবিতে দেখা যাবে। বাংলাদেশের থিয়েটারে অবদানের তুলনা অতুলনীয়। তিনি ২৬ টি নাটক লিখেছেন (চরিত্রের মৌলিক) এবং৩৬টি নাটক পরিচালনা করেছেন।

নাটক (লিখিত)
ভন্নুই (ভুতাই)
গোরু (গরু)
শতগ্রন্থী (শতগ্রন্থি)
প্রতিপাক্ষ (প্রতিবেদন)
বিবি আলির ভোট (বিবি আলির ভোট)
শাববাচহেদ (শাবক প্রেম)
চৌরাস্তা (চৌরাস্তা)
বাহে প্রান্টোজান (বহন প্রজনন)
দাইদিত্তো (বিশ্ব বিদ্যালয়)
ভাবমূর্তি (বর্ণমূর্তি)
সুনাগোরিকর সন্ধে (সুনাগ্রিতের সন্ধে)
টুন (তুন, বাঙালির গবেষণা)
ঘের (ঘের)
স্যাংক্রোমন (সংস্থান)
ভুমিকন্যা (ভুমিকনয়া)
হোতায়ার শিল্পকোলা (হায়দার শিল্পকলা)
উত্তরখোনা (উত্তরখনা)
ডোন্ডো (ডান্ডা)
জাগোরনার পাল (জাগো পালা)
দুর্জন ​​বর্জন (দুর্জন ​​বরজন)
বোকবোকি বেগম (বকবিকি তাপম)
অমি রানা ভাই বলছি (আমি রানা ভাই বলছি)
আন্তঃঘাট (ইন্টারঘাট)
এনটারনেট (এন্টারনেট)
মাওস্যাংকেটন (ম্যাসেজকেটটন)
বুডারামার কুপে পাড়া (বুড়ামার কুপে পড়া)
নাটক (নির্দেশিত)
শনি মনুশের খনজে (শুভেচ্ছা)
রাজজোটোক (রাজযোটক)
আয়না (আয়না)
ওরা কদম আলী (ওরা কদম শহর)
জোড়ী আমড়া সোবাই (আপনি আমাদের)
খপা পাগলার পঞ্চল (যাদু পাগলর পঞ্চল)
ইবলিশ (ইলিশ)
বাসন (জনন)
ভন্নুই (ভুতাই)
হাটোমালার ওপরে (হট্টমালার ওপারে)
শাব্দর্শন (শাব্দর্শন)
সত্য ভুটর গ্যাপো (সত্যিকারের গ্যাপ)
শ্রাব্যগুন
নিউ রইল কিছা (নিউস্ট্রাল কিসাসা)
পাভনাগন্দ (পাওনাগন্ডা)
চোখে অংগুল দাদা (চোখে আঙ্গুলের দাদা)
কিনু কাহার থেটার (ভিউ কাহার থিয়েটার)
Hothobondh (হঠবনধ)
বিবি আলির ভোট (বিবি আলির ভোট)
শাববাচহেদ (শাবক প্রেম)
দেওয়ান গাজির কিছা (দেওয়ান গাজীর কিসসা)
গালপো হেকিম সাহেব (গল্প হেকিম সাহেব)
দাইদিত্তো (বিশ্ব বিদ্যালয়)
ভাবমূর্তি (বর্ণমূর্তি)
সুনাগোরিকর সন্ধে (সুনাগ্রিতের সন্ধে)
ভুমিকন্যা (ভুমিকনয়া)
জোনম (জানুম, সাঁওতালি নাটক)
বরং রোশি (রথের রাশি)
উত্তরখোনা (উত্তরখনা)
ডান্ডো (ডান্ডা)
জাগোরোনার পাল (জাগো পালা)
দুর্জন ​​বর্জন (দুর্জন ​​বরজন)
আন্তঃঘাট (ইন্টারঘাট)
এনটারনেট (এন্টারনেট)
মাওস্যাংকেটন (ম্যাসেজকেটটন)
বুডারামার কুপে পাড়া (বুড়ামার কুপে পড়া)
প্রকাশনা
তিজ্জা প্রকাশক মালয় ভৌমিকের১২ টি মৌলিক নাটক সংগ্রহ করেছিলেন এবং এগুলি ‘মালয় ভৌমিকের নাট্যসাংরোহো’ নামে একটি বই হিসাবে প্রকাশ করেছিলেন। সর্বোপরি, তাঁর গবেষণা নিবন্ধ, প্রবন্ধ, কলাম এবং অন্যান্য সৃজনশীল লেখাগুলি বিভিন্ন দেশী বিদেশী সংবাদপত্র ও জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা-
মালয় ভৌমিক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯ ৭১ সালে, ১৫ বছর বয়সে, মলয় ভৌমিক বাংলাদেশের মুক্তির, জন্য লড়াইয়ের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তিনি ৭নম্বর সেক্টরে  যুদ্ধ করেছেন   ।

সকল  গণতান্ত্রিক আন্দোলনের তিনি সক্রিয়  ভূমিকা পালন করেছেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য ২০১৭ সালে মালয় ভৌমিক বাংলা একাডেমি পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে ] ১৯৯৯ সালে লোক নাট্যদল তাঁকে ‘মেডেল অব ড্রামা অ্যাক্টিভিস্ট’ ভূষিত করেছিলেন। অন্যান্য স্বীকৃতিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ‘মুনির চৌধুরী ২০০৮ সালে পুরষ্কার এবং ২০০৯ সালে ‘আরণ্যক দীপু স্মৃতি পদক’ আরণ্যক নাট্যদাল । আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্রের সমন্বয়ে এবং ‘ওয়ার্ল্ড থিয়েটার ডে’ অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি বক্তা হিসাবে শ্রোতাদের সম্বোধন করেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ২৫ শে মার্চ ২০০৮-এ তাঁর নাটক ‘উত্তরখোনা’ এখন ভারতের   রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার বিভাগের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ,

 

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment