বিএনপি ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধনীর আলোকেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেবে । দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শিগগিরই এই রূপরেখা তুলে ধরবে দলটি।
এ নিয়ে একটি খসড়া তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এতে নির্বাচনকালীন সরকারে প্রধান উপদেষ্টা ও দশজন উপদেষ্টা রাখার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি দল এবং বিরোধী দল মিলে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্যে এমন একজন সম্মানিত নাগরিক হবেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব মেনে নেবেন বলে আশা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সূত্রমতে, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় চলমান সংলাপে এ বিষয়ে মত নেয়া হচ্ছে।
তৃতীয় দফায় আবারও তাদের সঙ্গে সংলাপ করার কথা রয়েছে। খুব দ্রুত এই সংলাপ শেষ করে সবার মতামতের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পাশাপাশি ‘যুগপৎ’ আন্দোলনেরও রূপরেখা দেয়া হবে।
একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তাই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলনেই সমাধান দেখছে দল। সেভাবে প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশও ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের দেয়া হয়েছে।
দশ সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে। এরপর লংমার্চ কর্মসূচি পালনেরও কথা ভাবা হচ্ছে। সরকারবিরোধী দলগুলো ‘যুগপৎ’ আন্দোলনে নামবে। তারপরও দেশপ্রেমিক দল হিসাবে বিএনপি দেশের স্থিতিশীলতা ও জনগণের স্বার্থে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেবে। তা বাস্তবায়ন করবে কিনা তা সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির ওই রায়কে ভিত্তি ধরেই সংবিধান সংশোধন করে সরকার, যাতে বিলুপ্ত হয় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে এর আওতায় আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে মত দেয়া হয়। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেন চারজন বিচারপতি। এই রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন দুজন বিচারপতি। আর একজন বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে মত না দিয়ে বিষয়টি জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেন।
তিনি বলেন, এরপরের দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়নি, তাই আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতেই পারে। তবে এ বিষয়ে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
সূত্র আরও জানায়, আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যেই এই রূপরেখা দেবে বিএনপি। সরকারকে আরও চাপে ফেলতে আগেই বিএনপির সংসদ সদস্যদেরও পদত্যাগের প্রস্তুতি নিয়ে রাখার বিষয়েও বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ছিয়ানব্বইয়ের আলোকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব দেবেন। তখন তো বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, সংবিধানে এ ব্যবস্থা ছিল না। পরে বিএনপি যেভাবে সংবিধানে এ ব্যবস্থাকে সন্নিবেশিত করেছে, ওই একই প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে সংবিধানে সন্নিবেশিত করতে নতুনভাবে বলা হবে।
আরেক শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, বিএনপি শিগগিরই রূপরেখা দেবেন বলে তাদের জানিয়েছে। সংবিধানে তো সুযোগ নেই। কিন্তু সংবিধান তো অনেকবার কাটাছেঁড়া হয়েছে। আবারও হবে। আন্দোলনের এমন পর্যায়ে যাচ্ছে অনেক কিছুই করতে বাধ্য হবে সরকার।