একের পর এক কর্মসূচি সফলে চাঙ্গা বিএনপি। চট্টগ্রামের সমাবেশের সফলতার ধারাবাহিকতা ঢাকার সমাবেশ পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায় দলটি। পাশাপাশি সরকার পতনের চূড়ান্ত সফলতা না আসা পর্যন্ত এই নেতাকর্মীদের চাঙ্গাভাব ধরে রাখতে চায় তারা। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের চেয়ে ময়মনসিংহে আরও বড় সমাবেশ করার টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে বিএনপি।
গত কয়েক মাস ধরেই টানা কর্মসূচিতে আছে বিএনপি। শুধু কেন্দ্রীয় বা বিভাগীয় পর্যায়েই নয় সারা দেশের গ্রামপর্যায়ে কর্মসূচি করেছে দলটি। কর্মসূচি পালনে নানা বাধার সম্মুখীনও হতে হয়েছে। কিন্তু আন্দোলন থেকে বিএনপি পিছু হটেনি। নানা বাধা উপেক্ষা করে সর্বশেষ বুধবার চট্টগ্রামে কর্মসূচি সফল করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার পূর্ব ঘোষণা থাকলেও চট্টগ্রামের সমাবেশে নেতারা নির্বাচনমুখী বক্তব্য দেয়ায় নেতাকর্মীরা আরও চাঙ্গা হয়েছেন। পাশাপাশি বাধা দেয়া রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও প্রশাসনের সদস্যদের তালিকা করার ঘোষণা দেয়ায় নেতাকর্মীরা আরও উজ্জ্বীবিত।
চট্টগ্রামের কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক বাধার পরেও চট্টগ্রামে সময়ের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে। দলের নেতাকর্মী সাধারণ মানুষ সমাবেশকে মহাসমাবেশে পরিণত করেছেন। এছাড়া সমাবেশে আসার পথে যেসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বাধা দিয়েছেন এবং যেসব পুলিশ সদস্য বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করেছেন তাদের নামের তালিকা করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনেরদাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ইসু্য ছাড়া অন্য কোনো ইসু্যতে তারা সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা কিংবা সংলাপে যাবে না। চলমান আন্দোলন কোন দিকে মোড় নেবে তা আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশে সবার সামনে প্রকাশ পাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিলস্না, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর সমাবেশগুলো সফল করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে হাইকমান্ড। যাতে মূল লক্ষ্য ঢাকার সমাবেশ প্রত্যাশা অনুযায়ী সফল করা যায়। এরই মধ্যে ঢাকার সমাবেশে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মহাসমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন ঢাকা বিভাগের নেতারা। যাতে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের আগেই রাজপথ পুরো বিএনপির নিয়ন্ত্রণে আসে।
সূত্র মতে, কর্মসূচিগুলো সফল করতে বিএনপিতে প্রস্তুতির কমতি নেই। এর অংশ হিসেবে গত ১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ৮২ সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ দুই নেতাকে নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে মতবিনিময় বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। প্রতিটি সভা-সমাবেশে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিতির নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। সমাবেশগুলোতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়াতে ২০ লাখ লিফলেট ও ১০ লাখ পোস্টার ছাপানো হয়েছে।
আসন্ন ঢাকার সমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, সরকারবিরোধী গণআন্দোলন গড়ার লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। দলের প্রতিটি নেতাকর্মী আজ উজ্জীবিত। বিভাগীয় সমাবেশ সফলতার কারণে এরই মধ্য নেতাকর্মীদের মনোবল আরও চাঙ্গা হয়েছে। এখন শুধু নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষও যাতে অংশ নেন সে প্রস্তুতিই চলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ত করার জন্য সমাবেশের কর্মসূচি চলমান আছে। সাংগঠনিকভাবে যদি কোনো দুর্বলতা থাকে তা এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হবে। সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রম্নত তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেন্দ্রীয় সব নেতা, সাবেক এমপিদের সমাবেশ সফলে কার্যকরী ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।