দেশে প্রথমবারের মতো সুদমুক্তভাবে কিস্তিতে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছেন সফল উদ্যোক্তা মামুন হাসান। ইতোমধ্যে সুদ ছাড়াই ১০০টির উপরে বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন ২৬ বছর বয়সী এ তরুণ। শুধু বাড়ি নির্মাণ করেই থেমে থাকেননি। নিজের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে খরচ থেকে শুরু করে বাড়ি নির্মাণের সব কিছু তুলে ধরছেন। যা দেশের ইতিহাসে বিরল।
মামুন হাসানের জন্ম ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলায়। খুব অল্প বয়সে সফলতার দেখা পেলেও এর পেছনে রয়েছে এক অন্যরকম সংগ্রামের গল্প। সুদমুক্ত মানুষের স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ করে দিতে গিয়ে দেড় কোটি টাকার লোকসান গুণতে হয়েছে তাকে। তবুও মানুষের স্বপ্ন পূরণ করা থেকে পিছু হটেননি।
মামুন হাসান বলেন, মালয়েশিয়াতে আমি যখন একটি কোম্পানির ফোরম্যান ছিলাম তখন এক চাচাকে দেখলাম, যিনি তার পরিবারের সঙ্গে রাগারাগি করে কথা বলছিলেন। ওই চাচার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম- তিনি মিস্ত্রির মাধ্যমে তার জমানো পুঁজি দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। মিস্ত্রি তাকে বলেছিল ছাদ ঢালাই করতে খুব বেশি অর্থ খরচ হবে না। মিস্ত্রির কথা শুনে তার পরিবারের সদস্যরা বিল্ডিং করার কথা জানায়। এর পর তিনি টাকা ধার করে পাঠালেও এখনো দুই বছর পার হওয়ার পরেও বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি।
সুধু এই চাচারই নয়, এরকম অনেক প্রবাসীদের এমন অবস্থা দেখেই মূলত আমার দেশে এসে কন্সট্রাকশন নিয়ে কাজ করার আগ্রহ তীব্র হয়। প্রবাসী ভাইদের সহজে সবকিছু তৈরি করে দিতে সুদ মুক্তভাবে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করি।
ইউটিউব চ্যানেল খোলার কারণ হিসেবে তিনি জানান, যারা সঠিক তথ্য না জেনে বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে ধরা খাচ্ছেন। এই সমস্ত মানুষের কথা ভেবে আমি আমার কোম্পানির নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলি। এই চ্যানেলের মাধ্যমে সবাইকে বাড়ি নির্মাণের সঠিক তথ্য জানাই। একই সঙ্গে আমার চলমান প্রজেক্টগুলো লাইভ দেখাই। আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে আমার ইউটিউব চ্যানেলটি মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মানুষের ভালোবাসায় আমার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা দুই লাখ ছুঁই ছুঁই।
জানা গেছে, এই তরুণ উদ্যোক্তা কিশোর বয়সেই একজন কন্সট্রাকশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি পান। তার স্বপ্ন দেশের প্রতিটি জেলায় মাত্র ৬০ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে কোনো প্রকার সুদ বা ইন্টারেস্ট ছাড়াই মানুষের স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া। বর্তমানে দেশের ৪২টি জেলায় তার কোম্পানি মানুষের স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে।
মামুন হাসানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৯ সালে এসএসসি পাসের পর থেকেই নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এরপর দীর্ঘ ছয় বছর কন্সট্রাকশন সম্পর্কিত নানা কাজ শেখেন। ২০১৫ সালে প্রফেশনাল ভিসায় মালয়েশিয়াতে পাড়ি জমান। সেখানেও তিনি নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কাজের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে সিভিল কন্সট্রাকশনের ওপর ৬ মাস এবং এক বছর মেয়াদী দুটি কোর্স করেন। মালয়েশিয়াতে ছোট, বড় নানা ধরনের বাড়ি নির্মাণ করেছেন এই তরুণ। তবে দেশের জন্য কিছু করার আগ্রহ থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর গড়ে তুলেছেন, এম-সিটি গ্রুপ’। এই গ্রুপের সহপ্রতিষ্ঠান হিসাবে রয়েছে আরও চারটি প্রতিষ্ঠান। এমএইচসি কন্সট্রাকশন, এমএইচ গার্ডিয়ান প্রোপার্টিজ লিমিটেড, এমএইচ ইন্টেরিওর লিমিটেড এবং এমএইচ র্যাঞ্চ লিমিটেড।
মামুন হাসান বলেন, আমার সফলতার গল্প এত সহজ ছিল না। দেশের কন্সট্রাকশন বাজার অনেক কঠিন। সেখানে কীভাবে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরা যায় সেটি নিয়েই ভাবতাম। শুরুর দেড় বছর আমাকে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে। তবে আমি ভেঙে পড়িনি। নিজের লক্ষ্য পূরণে অটুট ছিলাম। ধৈর্য এবং পরিশ্রম করলে যে সফলতা আসবে সেই বিশ্বাস ছিল। আলহামদুলিল্লাহ সেজন্যই হয়তো আজ আল্লাহুর রহমতে এখানে পৌঁছাতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম আমরাই মাত্র ৬০ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে মানুষের স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছি এবং বাকি ৪০ শতাংশ অর্থ ৩৬টি কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ করে দিয়েছি। এই অর্থের ওপর কোনো সুদ দিতে হয় না। আমার মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষের সেবা করা। সাধারণ মানুষের স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া। ইনশাআল্লাহ এম-সিটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এমএইচসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড সর্বদা বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে।